ডলার শক্তিশালী হলেও পোশাক রপ্তানিকারকদের মুনাফা কমেছে ৫০ শতাংশ

পোশাক রপ্তানিকারকদের মুনাফা
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনেও মুনাফা কমার জন্য বাড়তি উৎপাদন খরচ ও রপ্তানি আদেশ কমার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাড়তি সুদের হার ও টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে দেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। এ অবস্থায় কেমন করছে বিভিন্ন শিল্প খাত তা নিয়ে আমাদের এই পর্বে পোশাক রপ্তানিকারকদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকা ১৬ শতাংশের বেশি দুর্বল হলেও পণ্য উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোর মুনাফা অনেক কমেছে।

দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন সাধারণত একটি দেশের রপ্তানিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হয়।

তবে তালিকাভুক্ত ২৯ পোশাক কারখানার মধ্যে ১৩টির মুনাফা কমেছে এবং পাঁচটি নতুন করে লোকসান গুণেছে।

গেল অর্থবছরে তাদের সম্মিলিত মুনাফা ৪৯ দশমিক শতাংশ কমে ৩২২ কোটি টাকা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য হিসাব করে পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট ও এমবি নিট ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার জানা মতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন পোশাক কারখানার প্রায় ৮০ শতাংশই লোকসানে আছে। বাকি ১০ শতাংশ ব্রেক-ইভেন ও বাকি ১০ শতাংশ মুনাফা করছে।'

তার মতে, টাকার অবমূল্যায়নের সুবিধাটি ছাপিয়ে গেছে গ্যাস ঘাটতি ও জ্বালানির বাড়তি দামের কারণে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত টাকার দাম ১৬ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ডলারপ্রতি ১০৯ টাকা হয়।

বিদ্যুতের দাম তিন বার পাঁচ শতাংশ করে বেড়েছে। একইভাবে ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ ও ফার্নেস অয়েলের দাম বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ।

গত অর্থবছরে কারখানায় গ্যাসের খুচরা দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়।

মোহাম্মদ হাতেম আরও জানান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে রপ্তানির চালান বাড়লেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি আদেশ কমেছে।

ইপিবির তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ১০ শতাংশ বেড়ে চার হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার হয়েছে।

তিনি মনে করেন, 'ইপিবির তথ্য সঠিক নয়। আমি বছরের পর বছর ধরে বলে আসছি যে এটি দেশের রপ্তানির তথ্যকে অতিরঞ্জিত করে।'

তালিকাভুক্ত পোশাক কারখানাগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে হিসাব করে পাওয়া গেছে—২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের বিক্রি তিন শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা হয়েছে। এটি আগের বছরে ১৪ শতাংশ বেড়েছিল।

একদিকে যখন গ্যাস সংকট চরমে, তখন রপ্তানি চাহিদাও কমেছে। চলতি অর্থবছরে পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা নেই।

২০২১-২২ অর্থবছরে আমান কটন ফাইবার্স, ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস, রহিম টেক্সটাইল মিলস, মালেক স্পিনিং মিলস ও সাফকো স্পিনিং মিলস মুনাফা করলেও পরের অর্থবছরে লোকসান করেছে।

তালিকাভুক্ত পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে স্কয়ার টেক্সটাইলকে পেছনে ফেলে বিক্রির দিক থেকে শীর্ষে উঠেছে মালেক স্পিনিং মিলস।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি চার শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৭৪২ কোটি টাকা হলেও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এর লোকসান হয়েছে ২২ কোটি টাকা। আগের বছর ৮৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল মালেক স্পিনিং।

এ দিকে, স্কয়ার টেক্সটাইলের বিক্রি পাঁচ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মুনাফা ৪১ শতাংশ কমে হয়েছে ১১৪ কোটি টাকা।

তালিকাভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনেও মুনাফা কমার জন্য বাড়তি উৎপাদন খরচ ও রপ্তানি আদেশ কমার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Has IMF experiment delivered?

Two years after Bangladesh turned to the International Monetary Fund (IMF) for a $4.7 billion bailout to address its worsening macroeconomic pressures, the nation stands at a crossroads.

9h ago