গত অর্থবছরের তুলনায় যে কারণে এ বছর সরকারের ব্যাংক ঋণ কম
সরকারি ব্যয় কম থাকায় ও বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের ফলে চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে।
এটি গত অর্থবছরের চিত্রের বিপরীত। সেসময় সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেকর্ড ৯৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এটি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের মোট পরিমাণ ছিল এক লাখ এক হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।
গত দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে থাকায় সরকার চলতি অর্থবছরে ঋণনীতি পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে।
গত জুলাই ও আগস্টে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়নি। বরং ফেরত দিয়েছে ২২ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।
তবে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৮৬২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা গেছে, এর ফলে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ৪২১ কোটি টাকা কমেছে।
কম উন্নয়ন খরচ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে বেশি রাজস্ব আদায় মূলত ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেছে।
গত জুলাই ও আগস্টে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি উৎস থেকে এসেছে ছয় হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে এসেছে ছয় হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা।
রাজস্ব বাজেটের আওতায় খরচের তথ্য তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে ভর্তুকি ও অন্যান্য কাজে খরচ এখনো বাড়েনি বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
এনবিআরের তথ্য অনুসারে, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ভ্যাট বেশি আসায় রাজস্ব সংগ্রহ প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ৪৬ হাজার ২৩৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বেশি পরিমাণে কর আদায় হওয়ায় সরকার ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছে। তবে সরকার কতদিন ঋণ পরিশোধ চালিয়ে যেতে পারবে তা দেখার বিষয়। কেননা, চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে খরচ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়ন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা।'
মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ না নিতে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় গত আগস্টে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ২৩ পয়েন্ট বেড়ে নয় দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের মাসে এটি ছিল নয় দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা সাত দশমিক পাঁচ শতাংশের বিপরীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভোক্তা মূল্য সূচক বেড়েছে হয়েছিল নয় দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। গত ১২ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগের দশকের পাঁচ-ছয় শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতির তুলনায় তা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ না নেওয়ায় তা খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য এর সমর্থন করে বলে মনে হচ্ছে।
জুনে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক ৬০ শতাংশ। জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়ায় নয় দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং আগস্টে তা আরও কমে হয় সাত দশমিক ৯৫ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ কম নিতে হবে। এটি শুধু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্যই নয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে তারল্য সংকটে না পড়ে এবং যাতে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত তহবিল পান।
Comments