আমদানি কাপড়ের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছেন পোশাক প্রস্তুতকারকরা
দেশে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কাপড়ের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকরা। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ওভেন কাপড়ের আমদানি কমেছে ২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো এখন মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের পণ্য সরবরাহে কম সময় বেঁধে দেওয়ায় পোশাকের উপকরণগুলো স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে আন্তর্জাতিক বিক্রেতারা নতুন ফ্যাশন পণ্যের জন্য মহামারির আগের সময়ের ৬ বা ৮ বিক্রয় মৌসুমের পরিবর্তে এখন ১২টি বিক্রয় মৌসুম করার চেষ্টা করছে।
তাই, তারা এখন পণ্যের দ্রুত চালান চাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা জাহাজে পণ্য সরবরাহের পরিবর্তে বেশি খরচে উড়োজাহাজের মাধ্যমে পণ্য নিতে চান।
আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর এমন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, বস্ত্র কারখানার পাশাপাশি তাঁতিরাও তাদের উত্পাদন বাড়াচ্ছেন।
স্থানীয় পোশাক সরবরাহকারীরা বিদেশি ক্রেতাদের বেঁধে দেওয়া কম সময়ের কারণে আমদানি করা কাপড়ের পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাপড় সংগ্রহ করছেন।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা পণ্য সরবরাহের জন্য আগের ৯০ ও ১২০ দিনের পরিবর্তে ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দিচ্ছেন।
আমদানি কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করতে গেলে এত অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ প্রায় অসম্ভব। কেননা, অন্য দেশ বিশেষ করে চীন থেকে বাংলাদেশে কাপড় আমদানি করতে অন্তত ৩০ দিন সময় লাগে।
পোশাক প্রস্তুতকারীরা যদি পণ্য সরবরাহে বেশি সময় নেন তাহলে তাদের কার্যাদেশ বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তাই স্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা সময় বাঁচাতে স্থানীয় বাজার থেকে তাদের প্রয়োজনীয় কাপড় কিনছেন।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ওভেন কাপড় আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭১ মেট্রিক টন। এটি গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৩২১ টন।
দামের দিক থেকে তা ১৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৬০ কোটি ৮৩ লাখ টাকায়।
স্থানীয়ভাবে কাপড়ের সংগ্রহ বেড়ে যাওয়া বোঝা যাচ্ছে যে পোশাক খাতে আরও মূল্য সংযোজন ঘটছে।
ওভেন কাপড় সরবরাহকারী মাহিন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (মাহিন) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৬ মাস ধরে প্রতিনিয়ত কাজের অর্ডার পাচ্ছি।'
পণ্য সরবরাহে কম সময় বেঁধে দেওয়ায় পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
একটি শীর্ষ স্প্যানিশ ব্র্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে মাহিন আরও বলেন, 'সেই ব্র্যান্ড সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহের মধ্যে পণ্য হাতে চায়। তাই স্থানীয় গার্মেন্টস মালিকরা আমদানি না করে স্থানীয় বাজার থেকে কাপড় কিনছেন।'
তিনি জানান, আগামী অক্টোবর পর্যন্ত ওয়ার্ক অর্ডারের চাপ আছে। এই বাড়তি চাহিদা মেটাতে তার মিলের উৎপাদন ক্ষমতার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করা হতে পারে।
নিট কাপড়ের ক্ষেত্রে, স্থানীয় কারখানাগুলো অনেক বছর ধরেই ৯০ শতাংশেরও বেশি কাঁচামাল সরবরাহে সক্ষম। তারা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারে।
হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চীন থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা চলে আসায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নন-ডেনিম কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো যত দ্রুত সম্ভব পণ্য ডেলিভারি চায়।'
'নিজেদের বাজার থেকে কাপড় কেনায় ক্রেতাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে,' উল্লেখ করে বিটিএমএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—গার্মেন্টস মালিকরা দেশের বাজার থেকে কাপড় নিয়ে পরে টাকা দিতে পারেন। গুণগত সমস্যা হলে কাপড় বদলে নিতে পারেন। এসব সুবিধা আমদানি করা কাপড়ের ক্ষেত্রে সম্ভব হতো না।'
প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল পাওয়ায় দেশের নিট কাপড় বহু বছর ধরে শক্ত অবস্থানে আছে।'
তিনি মনে করেন, দূর দেশে তৈরি পোশাক পাঠানো হয় বলে এবং সরাসরি শিপিং লাইন না থাকায় পোশাক রপ্তানিকারকদের অসুবিধায় পড়তে হয়।
ওভেন কাপড়ের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আমদানি করা কাপড়ের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনছি।'
কম্পোজিট কারখানাগুলো ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারে, কারণ তাদের হাতে কাঁচামাল আছে। তবে এমন কারখানার সংখ্যা কম।
বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয়ভাবে তৈরি ওভেন কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। তবে বছর শেষে এ সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।'
Comments