বাড়ছে ফোমের বাজার

ফোম
গত ৩০ বছর ধরে দেশে ফোমের বাজার ক্রমাগত বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

দেশে পলিউরেথেন ফোমের বাজারের পরিধি ক্রমাগত বাড়ছে। আসবাবপত্রের পাশাপাশি প্যাকেজিং ও তাপনিরোধক উপাদান হিসেবেও ফোম ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে গাড়ির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় অনেকে এখন গাড়ির সিট ও দরজায় ফোম ব্যবহার করছেন।

তারা জানান, গত ৩০ বছরে প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান পলিউরেথেন ফোম তৈরি করছে।

দেশে ফোমের বাজারে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে—ইউরোএশিয়া, প্রাণ-আরএফএল, সোয়ান, কারমো, বেঙ্গল, এপেক্স, এক্সপো গ্রুপ, আকতার, হোমটেক্স, হাতিল ও ক্লাসিক্যাল হোম।

২০১৬ সালে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ 'কমফি' নামে ফোম বাজারে আনে।

প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ধরনের পলিউরেথেন ফোম উৎপাদন করে যা নানান কাজে ব্যবহার করা হয়।

সাধারণত গদি ও বালিশের জন্য নরম বা অতি নরম ফোম, ফ্রিজে ব্যবহারের জন্য শক্ত ফোম, জুতার জন্য আরামদায়ক ফোম এবং গাড়ির সিট ও প্যানেলিংয়ের জন্য বেশি ঘনত্বের ফোম ব্যবহার করা হয়।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৭ বছরে দেশের ফোমের বাজারের প্রায় ১৫ শতাংশ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হাতে এসেছে।'

তিনি জানান, সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ফোমশিল্পে অন্তত ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

কামরুজ্জামান কামালের মতে, গত ৩ দশক ধরে ফোমের চাহিদা বার্ষিক প্রায় ১০ শতাংশ হারে বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যবসায় আরও অনেক বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের আসার সম্ভাবনা আছে।

ইউরো-এশিয়ার হেড অব কর্পোরেট শুভ্রজিৎ সরকার ডেইলি স্টারকে জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকার ফোমের বাজার আছে।

২০১৫ সালে ফোম তৈরির ব্যবসায় আসার পর থেকেই ইউরোএশিয়া মানসম্পন্ন পণ্য ও বিক্রয়োত্তর পরিষেবা দিয়ে বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হাতে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তার ভাষ্য, 'আমাদের গুণগত মান ও অঙ্গীকারের কারণে ইউরোএশিয়া দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড হিসেবে গ্রাহকদের মন জয় করেছে।'

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'দেশে ফোমের চাহিদা প্রতি মাসে ৩০ কোটি টাকা।'

এ ছাড়াও, এ খাতে এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অন্তত দেড় লাখ মানুষের কাজের সুযোগ হয়েছে।

তবে আসবাবপত্র ও জুতা তৈরির পাশাপাশি, প্যাকেজিংয়ের কাজেও ফোম ব্যবহার করা হচ্ছে।

শুভ্রজিৎ সরকার বলেন, 'ই-কমার্সের বিকাশ ও ভঙ্গুর পণ্যের রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় প্যাকেজিং উপকরণ হিসেবেও ফোমের চাহিদা বেড়েছে।'

দেশের নির্মাণশিল্পে তাপনিরোধক উপাদান হিসেবেও ফোমের ব্যবহার বেড়েছে।

দেশের অন্যতম শীর্ষ ফোম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সোয়ান ফোমের মহাব্যবস্থাপক আলী হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যবসায় আছেন এবং পণ্যের গুণগতমানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি কখনো আপস করেনি।

তার মতে, আসবাবপত্র ও অন্যান্য কাজে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ফোমের ব্যবহার বেড়ে গেলেও তা ঠিক কতটা বেড়েছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

একসময় ফোমের ব্যবহার আসবাবপত্র-কেন্দ্রিক ছিল। এখন তা গাড়ি, ফ্রিজ, জুতা ও আরও অনেক কিছুতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও, দেশের জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় গ্রামাঞ্চলেও ফোমের চাহিদা বেড়েছে।

আলী হোসেন আরও বলেন, 'বর্তমানে প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কেননা, এই শিল্পে খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান খুব একটা ভালো নয়।'

হাতিলের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আসবাবপত্রে ভালোমানের ফোম নিশ্চিত করতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবে ফোম তৈরির কারখানা করেছি।'

তাদের উৎপাদিত ফোম বাজারে বিক্রি করা হয় না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ফোমের ব্যবহার বহুমাত্রিক। তাই দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এর বাজার বাড়ছে।'

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মতো একটি দেশের অর্থনীতি যখন বিকশিত হয়, তখন অন্যান্য খাত নীরবে বিকশিত হয়, যা সাধারণত সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না।

ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকার মেসার্স আর আর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ারুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে এখনো ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের আধিপত্য থাকায় ফোমশিল্প পুরোপুরি সংগঠিত হতে পারেনি।'

Comments

The Daily Star  | English

The constitution: Reforms only after a strong consensus

Constitutional reforms should be done after taking people’s opinions into account, said Dr Kamal Hossain, one of the framers of the constitution.

2h ago