গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ বাড়ছে
দেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে। সরকার আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
পেঁয়াজের আবাদ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বছরে ৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৭০০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুসারে, বিগত অর্থবছর কৃষকরা প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ মাঠ থেকে পেয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শস্য শাখার অতিরিক্ত পরিচালক রবিউল হক মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি মৌসুমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'খরিপ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে আমরা প্রণোদনা হিসেবে বীজ দেব।'
সাধারণত ১৫ মার্চ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত খরিপ-১ ও ১৬ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত খরিপ-২ ধরা হয়। রবিউল হক মজুমদার বলেন, 'খরিপ-২ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ফলন বেশি হয়।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'পেঁয়াজ চাষের প্রসার ও এর মাধ্যমে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে সরকার কৃষকদের বিঘা প্রতি ৯ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।'
২০১৯ সালে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর দেশে পেয়াজের দাম কেজিতে রেকর্ড ২৫০ টাকায় পৌঁছায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের সম্ভাবনা দেখে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়, যাতে অক্টোবর নভেম্বর মাসে লিন পিরিয়ডে যখন শীতকালীন পেয়াজের মজুদ কমে তখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো যায়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুসারে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের প্রয়োজন।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে—দেশে শীত মৌসুমে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ উত্পন্ন হয়। এর একটি বড় অংশ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। ফলে মৌসুম শেষে এর ঘাটতি দেখা দেয়। যার কারণে বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়।
কৃষি কর্মকর্তা ও গবেষকরা ডেইলি স্টারকে জানান, মৌসুম শেষে পেঁয়াজের সরবরাহ মেটাতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ প্রসারে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শস্য শাখার অতিরিক্ত পরিচালক রবিউল হক মজুমদার আরও বলেন, 'গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ একটি সম্ভাবনাময় ফসল। এর চাষ সম্প্রসারণে সরকার সহায়তা দিচ্ছে।'
পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষি শাহিদা বেগম ডেইলি স্টারকে জানান, দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেন এবং তার পরিবার এ বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন।
এরই অংশ হিসেবে চলতি মৌসুমে ৩ একর জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় তার পরিবার জমি ইজারা নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
শাহিদা বেগম আরও বলেন, 'আশা করছি, নভেম্বরে পেঁয়াজ তোলা যাবে। সেসময় কৃষকদের কাছে শীতকালীন পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে আসায় এর দাম বেশি থাকবে।'
তবে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ চাষ চ্যালেঞ্জিং।
'বৃষ্টিতে চারাগাছের একটা অংশ নষ্ট হয়ে যায়,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ভারী বৃষ্টি ও বন্যার ঝুঁকি পেঁয়াজ চাষে ২ প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে দেশের সব জায়গায় বন্যা হয় না।'
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে অভ্যস্ত ছিলেন না।'
তিনি মনে করেন, 'এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বীজের ঘাটতি। আমরা যদি বীজ উৎপাদন করতে পারি এবং তা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।'
তার মতে, 'আমরা যদি তা করতে পারি, তাহলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে পারব। শীতকালীন পেঁয়াজের উৎপাদনও বাড়াতে হবে। লাভজনক দাম নিশ্চিত করা গেলে কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হবেন।'
'ফসল কাটার মৌসুমে আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে চাষিদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মশলা গবেষণা কেন্দ্রের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. নূর আলম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, পাবনা ও দিনাজপুরের মতো জেলাগুলো অনেক সম্ভাবনাময়।'
তার ভাষ্য, 'যেখানে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ফলন ভালো হয় সেখানে আমরা কৃষক ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেব। আমরা তাদের বীজও সরবরাহ করব।'
(দ্য ডেইলি স্টারের ফরিদপুর সংবাদদাতা এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন)
Comments