ফগিং মেশিন চালানোয় দক্ষতা অর্জনে জার্মানি ভ্রমণ

ফগিং মেশিন
স্টার ফাইল ফটো

মশার ফগিং মেশিন চালানোর দক্ষতা অর্জনের জন্য সম্প্রতি চার জন সরকারি কর্মকর্তা ও একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জার্মানি সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এই কর্মকর্তারা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর গত ১৭-২৩ আগস্ট জার্মানিতে ট্রেইনিংয়ের জন্য যান। সেখানে থার্মাল ফগার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পালসফগে তারা প্রশিক্ষণ নেন। যদিও এই কর্মকর্তারা এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশানিধন প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত নন। 

এলজিডি মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে বলা হয়, ভ্রমণ ব্যয় জার্মান প্রতিষ্ঠানটি বহন করেছে। 

সম্প্রতি ডিএনসিসি পালসফগের কাছ থেকে ১০০টি ফগিং মেশিন কিনেছে বলে ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা জানান।

সূত্র জানায়, এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল ডিএনসিসির মশকনিধন অভিযান এবং নতুন কেনা ফগার মেশিন পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। 

প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো কর্মকর্তারা হলেন এলজিডির উপসচিব মো. নুরে আলম, ডিএনসিসির উপসচিব ও চিফ স্টোর অ্যান্ড পারচেজ অফিসার রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, উপসচিব ও ডিএনসিসির জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার (জোন-২) জিয়াউর রহমান, ডিএনসিসির উপসচিব ও জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার (জোন-৫) মোতাকাব্বির আহমেদ এবং ডিএনসিসির জোন ৩ এর স্প্রেম্যান সুপারভাইজার আহসান হাবীব। এলজিডি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পিন্টু বেপারী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, ডিএনসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিলেন।

বিদেশে প্রশিক্ষণ এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন দেশ এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর রেকর্ড প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে লড়াই করছে।

প্রখ্যাত কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রশিক্ষণের জন্য আমলাদের পাঠানোর কোনো মানে হয় না। প্রশিক্ষণটি জার্মানিতে না করে ঢাকায় করা যেত।' 

তিনি বলেন, আরও যৌক্তিক হতো যদি ডিএনসিসির ফগার অপারেটর, কীটতত্ববিদ এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ যারা এডিস মশকনিধন অভিযানে সরাসরি জড়িত তাদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের সাবেক পরিচালক ড. বে-নজির আহমেদ বলেন, যাদের পাঠানো হয়েছে সেটি একেবারেই ঠিক হয়নি। কীটতত্ত্ববিদদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো উচিত ছিল।

তিনি আরও জানান, ফগার মেশিন কিউলেক্স মশা নিধনে ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে কীটতত্ত্ববিদরা প্রশিক্ষিত হলে আরও ভালো অবদান রাখতে পারতেন। 

অফিস আদেশে স্বাক্ষরকারী পিন্টু বেপারির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি নির্দেশনা অনুযায়ী চিঠি দিয়েছি। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।' 

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা প্রশিক্ষণের জন্য আমলাদের পাঠানোর যৌক্তিকতা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬ জন, যাদের মধ্যে ৮ জনই ঢাকার। 

এ নিয়ে ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৩৪ জনে, যার মধ্যে ৪৬৪ জন ঢাকার বাইরের। 

সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৯২ জনই ঢাকার। 

এ নিয়ে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১ লাখ ৩০ হাজার ৩০২ জনে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছেন ৬০ হাজার ৪৮৪ জন। 

বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ হাজার ৮৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩ হাজার ৯২৮ জন ঢাকায়।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

12h ago