অনলাইন ব্যাংকিং ৫০ হাজার কোটি টাকার মাইলফলকে
গত মে মাসে অনলাইন ব্যাংকিং প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সময় বাঁচাতে ও অন্যান্য ঝামেলা এড়াতে অনেকে অনলাইনে লেনদেন সম্পন্ন করছেন বলে এ খাত এই নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বছরের তুলনায় অনলাইন ব্যাংকিং ১৪২ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে গত মাসের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি এসেছে ১২ শতাংশ।
এটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ।
এই সর্বোচ্চ লেনদেনের কারণ—গ্রাহকরা ক্রমবর্ধমান অনলাইন ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন এবং ব্যাংকগুলো দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত পরিষেবা দিতে প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা অনলাইন ব্যাংকিংয়ে লেনদেন সাংঘাতিক হারে বাড়তে দেখছি। কারণ, মানুষ ঘরে বসেই তার ব্যাংকিং সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করছি। ব্যাংকগুলোও আগ্রহ দেখাচ্ছে। কারণ, এটিএমের মাধ্যমে লেনদেনের তুলনায় ইলেকট্রনিক লেনদেনে খরচ কম।'
'অনেক ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ ছিল না। এখন ৪০টিরও বেশি ব্যাংকের অ্যাপ আছে।'
গ্রাহকদের অনলাইন ব্যাংকিং বিষয়ে জানাশোনা ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও অনলাইন ব্যাংকিং নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে।
ডিজিটাল ব্যাংকিংকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য লেনদেনের অর্থসীমা বাড়িয়ে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (বিডি-আরটিজিএস) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) চালু এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, 'ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ ও মোবাইল রিচার্জ অনেক বেড়েছে।'
'এক সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা ঝামেলার বিষয় ছিল। এখন অনেকেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করছেন।'
'মানুষ খুব দ্রুত গতিতে অনলাইন লেনদেনের দিকে ঝুঁকছেন। অনেকে অনলাইনে কেনা-বেচা করছেন,' যোগ করেন তিনি।
গত ৫ বছরে দেশের এই অন্যতম প্রাচীন ও বৃহত্তম ব্যাংকটির ডিজিটাল লেনদেনে গড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৩ শতাংশ।
'গ্রাহকদের এখনো তাদের চেকের কাজে ব্যাংকে আসতে হয়' উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী বলেন, 'তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউনিফাইড সিস্টেম বা অ্যাপ তৈরি করলে গ্রাহকদের ব্যাংকে আসার প্রয়োজন হবে না। অ্যাকাউন্টহোল্ডাররা অনলাইনে লেনদেনের জন্য চেকের ছবি আপলোড করতে পারবেন।'
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসছে।'
তিনি বলেন, 'মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যাংক সংযুক্ত হওয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি দ্রুত বেড়েছে।'
'গ্রাহকরা এক সময় এমএফএসের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। এখন এমএফএস থেকেও আমানত আসছে। এর পরিসর বিস্তৃত হচ্ছে,' উল্লেখ করে তিনি জানান, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড ন্যানো ডিপোজিট চালু করেছে এবং অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা বাড়িয়েছে।
সাইবার অ্যাটাক ও অর্থ জালিয়াতির ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ব্যাংকগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের সিস্টেম রক্ষায় ফায়ারওয়াল তৈরিতে বিনিয়োগ করছে।'
মেজবাউল হকের মতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে আইসিটি রিস্ক ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন জারি করেছে তা অনুসরণ করতে ব্যাংকগুলোকে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
অনলাইনে লেনদেনের বিষয়ে গ্রাহকদের জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
Comments