৮ মাসে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল কমেছে ৩০ শতাংশ

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে প্রভাব ফেলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত নানা বিধিনিষেধও কার্গো চলাচল কমে আসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতু থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ডলার সংকটের মধ্যে আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসায় গত ৮ মাসে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পণ্যবাহী নৌযান (কার্গো) চলাচল ৩০ শতাংশ কমেছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা হয়েছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ৮ মাসে এলসি নিষ্পত্তি ৫২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ দশমিক ২২ শতাংশ কমে ৫ হাজার ২০১ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

একই সময়ে ইস্যু করা এলসিগুলোর মধ্যে ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য খোলা এলসি ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে ৫ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার।

একইভাবে চলতি অর্থবছরে মধ্যবর্তী শিল্প পণ্যের জন্য এলসি খোলার পরিমাণ ৪ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার এবং শিল্প কাঁচামালের ক্ষেত্রে ৩০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কমে ২২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে ম্যাক্স করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, 'চলমান ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের মধ্যে আমদানি কমে যাওয়ায় গত ৮ মাসে কার্গো চলাচল ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।'

তিনি বলেন, কার্গো জাহাজ মূলত বিভিন্ন শিল্পের জন্য আমদানিকৃত কাঁচামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়, যারা এলসি খোলার অসুবিধার কারণে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে।

সাইফুল আলম জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২ হাজার কার্গো আছে, যা পণ্য পরিবহনের জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে। এগুলোর মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা কার্গোও আছে। এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা, যা সরাসরি প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে।

তার ধারণা, সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত কার্গো চলাচলের এই ধারা জারি থাকবে।

মেসার্স নুরুল হক ওয়াটার নেভিগেশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ নুরুল হকের ভাষ্য, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তাদের ব্যবসায় যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তার আরও খারাপ হয়েছে।

তিনি বলেন, 'যেহেতু বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, তাই সড়কপথের তুলনায় অভ্যন্তরীণ নৌপথের মাধ্যমে প্রধান বন্দর থেকে নদীবন্দরগুলোতে পণ্য পরিবহনের বিষয়টি অপেক্ষাকৃত সহজ, সস্তা ও পরিবেশবান্ধব।'

নুরুল হকের পর্যবেক্ষণ হলো, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে প্রভাব ফেলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত নানা বিধিনিষেধও কার্গো চলাচল কমে আসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, 'ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের আদেশ অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন কারখানায় আমদানি পণ্য নিয়ে যাই। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারছেন না। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কার্গো চলাচলের ওপর।'

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রাপ্তি কমে আসার বিপরীতে আমদানি বিল বৃদ্ধির পাশাপাশি ডলারের ঘাটতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ম কঠোর করেছে।

সেইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে জ্বালানি তেল, মজুরি এবং অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণগুলোও কার্গো চলাচলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে এমনকি নদীপথেও ভারত থেকে শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও খাদ্যশস্য আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

বিভিন্ন শিপিং এজেন্টরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের ৮ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার চলাচল ২৮ শতাংশেরও বেশি কমেছে।

কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহরুল করিমও বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সমুদ্রগামী কার্গো জাহাজ চলাচল কমে এসেছে।

তার ভাষ্য, দেশে শিপিং ও কার্গো সার্ভিস মূলত একটি একমুখী ব্যবসা, যা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং স্থানীয় বাণিজ্যে পরিবর্তন না আসলে এই শিল্পের কোনো উন্নতি হবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Constitution should be updated

Dr Kamal Hossain, emeritus president of Gono Forum, yesterday recommended updating the constitution.

16m ago