ক্ষুদ্র-বৃহৎ শিল্পের প্রণোদনা তহবিল বিতরণে ধীরগতি

ফাইল ফটো

করোনাকালে সরকারের চালু করা ২৮ প্রণোদনা প্যাকেজের ২টিতে চলতি অর্থবছরে নতুন করে ৫০ হাজার কোটি টাকার তহবিল যোগ করা হলেও জুলাই-অক্টোবরে এর মাত্র ৪ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।

উভয় প্যাকেজের লক্ষ্য ছিল বড় শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) কার্যকরী মূলধন দেওয়া। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন মতে, অক্টোবরে সার্বিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ২ হাজার ১৫১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, যারা ইতোমধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আগের ২ রাউন্ডে ঋণ নিয়েছে, তাদের অনেকেই এখনো সেই ঋণ পরিশোধ করেনি। এ কারণে তারা সর্বশেষ রাউন্ডের বরাদ্দ থেকে নতুন করে ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি।

কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সময়মতো ঋণ পরিশোধ করছে। অন্যান্যরা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করছে।

সার্বিকভাবে প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ। সরকার ভর্তুকি হিসেবে এই সুদের অর্ধেক বহন করে।

২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করে।

প্রথমে পোশাক নির্মাতাদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা হয়, যাতে এই স্বল্প-খরচের তহবিলের ব্যবহারে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি শিল্পের কর্মীদের বেতন ও ভাতা অব্যাহত থাকে।

এরপর থেকে সরকার ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে মোট ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণা দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ১৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যা মোট তহবিলের ৬৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান এবং সিএমএসএমইদের জন্য চালু করা ২টি বড় কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হয়েছে।

২০২০ সালের এপ্রিলে সরকার বড় শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণা দেয়। একই বছর তহবিলে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা যোগ করা হয়।

২০২১ সালের জুলাইতে এই প্যাকেজে ৩৩ হাজার কোটি ও গত বছরের জুলাইতে তৃতীয় রাউন্ডে আরও ৩০ হাজার কোটি যোগ করা হয়। অর্থাৎ এই প্যাকেজে মোট ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যার মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত ৪৬ হাজার ২৭৮ কোটি বিতরণ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে জানা গেছে, তৃতীয় রাউন্ডে বরাদ্দ দেওয়া ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৮৩৯ কোটি বিতরণ করা হয়েছে।

গত বছরের জুলাইতে সরকার তৃতীয় রাউন্ডে সিএমএসএমইদের প্যাকেজে ২০ হাজার কোটি টাকা যোগ করে, যার ফলে তহবিলের পরিমাণ বেড়ে মোট ৬০ হাজার কোটি টাকা হয়।

অক্টোবর পর্যন্ত এই প্যাকেজের আওতায় বিতরণের পরিমাণ ৩১ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসেই ১ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়।

অর্থাৎ সিএমএসএমই প্যাকেজের আওতায় তহবিল বিতরণের পরিমাণ বড় শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজের বিতরণের চেয়ে বেশি হয়েছে।

সরকার প্রাথমিকভাবে কৃষিখাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃতফসিল স্কিম চালু করে। পরবর্তীতে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা যোগ করে এই তহবিলকে ৮ হাজার কোটি টাকায় সম্প্রসারিত করা হয়। এই তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

একটি প্রণোদনা প্যাকেজের উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষি খাতের আধুনিকায়ন। এই প্যাকেজে বরাদ্দ করা ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে ২ হাজার ১৩৩ কোটি খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও, কৃষকদের ১৩ হাজার ৬৯৪টি কৃষি যন্ত্র দেওয়া হয়েছে।

নিম্ন আয়ের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃতফশিল স্কিমও চালু করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

সরকার প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট পুনঃতফশিল স্কিমের আওতায় ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, যার উদ্দেশ্য রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা বাড়ানো। ২০২০ সালের এপ্রিলে এটি চালু হয়। এ পর্যন্ত এই তহবিল থেকে ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

শুরুতে বিতরণের গতি খুব ধীর হলেও পরে নীতিমালা সংশোধন ও ব্যাংক যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিল, সেগুলো দূর করার জন্য কিছু সহায়তা প্যাকেজ চালুর কারণে এটি গতিশীল হয়। বেশিরভাগ ক্রেডিট সহায়তা প্যাকেজ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ব্যাংকগুলোই।

কিছু প্যাকেজে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

এর মধ্যে একটি হচ্ছে তৈরি পোশাক, ট্যানারি ও ফুটওয়্যার খাতের বেকার কর্মীদের মাঝে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার নগদ অর্থ বিতরণ। এই তহবিল থেকে মাত্র ৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য সরকার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এ যাবত ২৪৫ জন নিহত কর্মীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৯৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার আশা করছে বিতরণ আরও গতিশীল হবে, কারণ এখনো চলতি অর্থবছরের বেশ খানিকটা সময় বাকি রয়েছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

 

Comments

The Daily Star  | English

From gravel beds to tourists’ treasure

A couple of decades ago, Panchagarh, the northernmost district of Bangladesh, was primarily known for its abundance of gravel beds. With thousands of acres of land devoted to digging for the resource, the backbone of the region’s rural economy was based on those natural resources.

14h ago