খাদ্য সংকটে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ: বিশ্বব্যাংক

World Bank logo

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি বলে বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে গেছেন এমন মানুষের সংখ্যা গত বছরের জুনে ছিল ৭ শতাংশ। চলতি বছরের মে মাসে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ আয়াগো ওয়াম্বিলে সমীক্ষার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ১০ বার টেলিফোনে ১ হাজার ৩০০ থেকে ৭ হাজার ৭০০ মানুষের ওপর জরিপের মাধ্যমে এ সমীক্ষা চালায় বিশ্বব্যাংক।

সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, এ বছরের মে মাসে ৬ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে পারছিলেন না। গত বছরের জুনে এ সংখ্যা ছিল ৫ শতাংশ।

একদিন খাবার খেতে পারেন না এমন মানুষের সংখ্যা গত বছরের জুনে ছিল ১ শতাংশ। এটি চলতি বছরের মে মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশে।

তবে গত এক বছরে কম খাবার খাওয়া মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে।

গত বছরের জুনের ১৭ শতাংশ থেকে চলতি বছরের মে মাসে এই সংখ্যা কমে ৯ শতাংশে এসেছে।

সমীক্ষার মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে আয়াগো ওয়াম্বিলে বলেন, 'মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং খাদ্য নিরাপত্তার মূল প্রতিবন্ধক।'

'খাদ্য নিরাপত্তা না থাকায় দরিদ্রতম দেশগুলোর জনগণের জীবনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের এ সমীক্ষায় বলা হয়, ২০২১ সালের জুনে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা ছিল যা এ বছরেও একই আছে।

বিশ্বব্যাংকের আরেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ শৈলেশ তিওয়ারি বলেন, 'করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি "ভি" আকৃতির পুনরুদ্ধার হয়েছে তবে তা ছিল অসম। কারণ সব ধরনের মানুষ এর সুফল পায়নি।'

"ভি" আকৃতির পুনরুদ্ধারের মানে দাঁড়ায় ভয়াবহ পতনের পরে অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি।

'ট্র্যাকিং ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ: হাই ফ্রিকোয়েন্সি ফোন সার্ভে' শীর্ষক জরিপ ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মে মাসের মধ্যে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জাতীয় পর্যায়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বস্তি ও দরিদ্র এলাকায় পরিচালিত হয়েছিল।

সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালের জুনে সংকটকালে বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষের হাতে জরুরি হিসেবে নগদ ২৫ হাজার টাকাও ছিল না। তবে এ বছরের মে মাসে এই সংখ্যা ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

সেমিনারে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, 'জনসংখ্যার বড় অংশ সংকটের সময়ে নগদ অর্থের সমস্যায় পড়েন। তাদের সংকটে মাত্র ২৫ হাজার টাকা ধার করতে হয়। উন্নত দেশগুলোয় রাষ্ট্র জনগণের সাহায্যার্থে নগদ অর্থ বিতরণ করে। আমাদের এখানে এটি নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'ভাইরাসের বিস্তারের পর লকডাউনের সময় দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ধীরে ধীরে তা পুনরুদ্ধার হয়। কিন্তু, সবাই এর সুফল সমানভাবে পাননি।'

আয়াগো ওয়াম্বিল জানান, বস্তি এলাকার ৫৫ শতাংশ মানুষ ২০২০ সালের জুনে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেননি। এ বছরের মে মাসে এই সংখ্যা কমে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

'এতে দেখা যায় যে বস্তি এলাকার ২৫ শতাংশ মানুষ এখনো ঘর ভাড়া দিতে পারছেন না,' যোগ করেন তিনি।

সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে, ২০২০ সালের জুনে বস্তি এলাকার ২২ শতাংশ পরিবার ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে এই আশঙ্কায় ছিলেন। এই সংখ্যা ২০২২ সালের মে মাসে ১৪ শতাংশে নেমে আসে।

এ অবস্থায় পরিবেশগত বিপর্যয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যখাতে বড় ধাক্কার জন্য সরকারকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদ আয়াগো ওয়াম্বিল।

ভবিষ্যৎ ধাক্কাগুলোর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে কল সেন্টারের মতো অবকাঠামো স্থাপনের ওপর জোর দেন তিনি।

অর্থনৈতিক ধাক্কার ঝুঁকি বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো ও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

Comments

The Daily Star  | English

CA likely to announce election date within 4-5 days: Mostafa Jamal

The Jatiya Party (Kazi Zafar) chief made the remarks after a meeting between Yunus and 12 parties at the state guest house Jamuna

6h ago