দেশে পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্যের বাজার বাড়ছে

পোষা প্রাণী, করোনা মহামারি,
ছবি: নাফিসা ইসলাম

ঘরে পোষা প্রাণী রাখা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও পোষা প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল ভাবনার কারণে দেশে পোষা প্রাণীর খাবার ও এর আনুষঙ্গিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।

পোষা প্রাণীর প্রতি পরিবারের সদস্যের মতো আচরণ করা মানুষজন তাদের নিজের মতো পোষা প্রাণীকেও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন দেওয়ার চেষ্টা করেন। দেশের মানুষের পরিবর্তিত জীবনধারা ও আয় বৃদ্ধির কারণে পোষা প্রাণীর যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে।

নাফিসা ইসলামের কথাই ধরা যাক। তার পোষা প্রাণীর জন্য আছে একটি লিটার বক্স, খাবারের বাটি ও আলাদা একটি ঘর।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার দুইটি বিড়ালের দেখাশোনা ও চিকিৎসার জন্য আমাকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার বেশি খরচ করতে হয়।'

এদিকে একটি পোষা কুকুরের মালিক সাকিব খান ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতি মাসে তার খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকার মতো।

ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত প্রসূন চৌধুরীর লালমাটিয়ার বাসায় তার সঙ্গী হিসেবে আছে একটি পোষা কুকুর।

এই তিন জনের মতো আরও অনেকে আছেন যারা বিড়াল, কুকুর, খরগোশ ও পাখির মতো পোষা প্রাণীগুলোকে তাদের পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মতো যত্ন নেন।

প্রায় এক দশক আগে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো পোষা প্রাণী যত্নে সচেতনতা বৃদ্ধি ও রাস্তা থেকে অসুস্থ প্রাণী উদ্ধার কাজ শুরুর পর থেকে রাজধানীজুড়ে পোষা প্রাণী উদ্ধারকর্মী ও প্রাণী দত্তক নেওয়া ব্যক্তির সংখ্যা হঠাৎ করে বাড়তে থাকে।

প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির হার আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে।

পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান পেট জোন বিডির মালিক জুবায়ের মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশেষ করে করোনা মহামারিতে লকডাউনের সময় পোষা প্রাণীর খাবার, আনুষঙ্গিক পণ্য ও ওষুধের চাহিদা বেড়ে যায়।'

তিনি জানান, ২০১৯ সালে প্রতি মাসে পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা।

মহামারির আগে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২ লাখ গ্রাহক ছিল, বর্তমানে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পোষা প্রাণীর খাবার ও লালন-পালন করার বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়। এর বাজার প্রতি বছর ২০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে।

তবে পোষা প্রাণীর খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্য—সবই আমদানি করতে হয়।

গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিসটার মতে, ২০২৮ সালে পোষা প্রাণীর খাবারের বাজার নয় দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ৩০৮ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মিউ মিউ শপ বিডির প্রধান নির্বাহী সামসুদ্দৌহা রিয়াদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০১৭ সালে তিনি ও তার এক বন্ধু মিলে ব্যবসা শুরু করেন। যখন তারা দেখলেন যে বাজার বাড়ছে, তখন তারা আরও পেশাদারিত্ব নিয়ে ব্যবসা চালাতে শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা যদি বর্তমান মাসিক বিক্রির পরিস্থিতিকে শুরুর সময়ের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে বিক্রি প্রায় ১০ গুন বেড়েছে।'

পোষা প্রাণী ডট কমের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্যের তালিকায় বিড়ালের খাবার, খেলনা ও অন্যান্য পণ্য।

২০১৭ সালের তুলনায় এগুলোর বিক্রি ৭০-৮০ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থ্রিএস ইমপেক্স ২০০০ সালে ব্যবসা শুরুর সময় মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার খাবার ও পণ্য বিক্রি করত।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন বিক্রি বেড়ে প্রায় দুই কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।'

তিনি বলেন, পোষা প্রাণীর প্রতি মানুষের যত্নশীলতা দিন দিন বাড়ছে। এসব পণ্যের বাজারও বড় হচ্ছে। তবে তা এখনো সংগঠিতভাবে হচ্ছে না।

Comments

The Daily Star  | English

Political parties with phantom addresses queue for EC nod

In its application for registration with the Election Commission, Janatar Bangladesh Party has said its central office is located on the 12th floor of Darus Salam Arcade near the capital’s Paltan intersection.

1d ago