অর্থনীতিতে নোবেল নিয়ে যা বললেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

'ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট' নিয়ে গবেষণা করে এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন ৩ অর্থনীতিবিদ। গবেষণার মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন, 'ব্যাংকের পতন এড়ানো কেনো গুরুত্বপূর্ণ।' এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার ফেসবুকে নোবেল পুরস্কারের বিষয় ও বাংলাদেশের ব্যাংকিং পরিস্থিতির বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য লিখেছেন। 

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সেখানে বলেছেন, 'এ বছর আর্থিক খাতের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য যে ৩ জন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তারা সবাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন। ৩ জনের বয়সই সত্তুরের কাছাকাছি এবং এ বিষয়ে তাদের গবেষণার শুরু আশির দশকের প্রথম থেকে। শুধু উন্নত দেশের জন্যই নয়, স্বল্পোন্নত দেশের ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাদের গবেষণা থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।'

'এর আগেও আর্থিক খাতের বিশ্লেষণের জন্য ১৯৯৭ সনে দুজন এবং ২০১৩ সনে ৩ জন অর্থনীতিবিদকে যৌথভাবে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের সবারই গবেষণা ছিল শেয়ার বাজারের গতি-প্রকৃতি ও উত্থান-পতন নিয়ে। ওই সব বিশ্লেষণ শেয়ার বাজারের বিপর্যয় ঠেকাতে বা এ নিয়ে সঠিক পূর্বাভাস দিতে খুব কাজে দেয়নি বলে মনে করা হয়। কারণ শেয়ার বাজারের কেনা-বেচার ধরন শুধু অর্থনীতির যৌক্তিক আচরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, যে কারণে স্নায়ু-অর্থনীতি বা neuro-economics নামে নতুন ধারার অর্থনীতি নিয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে।' 

'কিন্তু এবারের নোবেল বিজয়ীদের কাজ আর্থিক খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে এবং তাদের বিশ্লেষণ অনেক বেশি বাস্তবমুখী, যা ব্যাংক ব্যবস্থার সম্ভাব্য ধস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন, তার মধ্যে আছে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি আমানতকারীদের আস্থার সংকট, ঋণ মঞ্জুর করার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব, ব্যাংকের তারল্য ও মূলধন ঘাটতির বিষয়ে সতর্কতা, সংকটাপন্ন ব্যাংকে বাঁচিয়ে রাখতে আমানতের ওপর যথেষ্ট অংকের বিমার ব্যবস্থা এবং যথা সময়ে সতর্ক না হবার খেসারত হিসেবে পরবর্তীতে দেউলিয়া ব্যাংকে বাঁচাতে সরকারের বড় অংকের ব্যয়ের বোঝা বহন।'

'উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ব্যাংকখাতের জন্য এই সবগুলো বিষয়েই সতর্কতা জরুরি। যতদূর মনে পড়ে আমাদের ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত আমানতপ্রতি মাত্র ১ লাখ টাকা বিমাকৃত। ইতোমধ্যে ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়া থেকে উদ্ধার করার ঘটনা দেখা গেছে, অনেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতার ঘাটতি নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে, কিন্তু অবস্থার খুব উন্নতি হচ্ছে বলা যাবে না। ব্যাংকে টাকা আমানত রাখার তেমন কোনো বিকল্প নেই বলে ব্যাংকখাতের সমস্যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না; কিন্তু যখন কোনো বিপর্যয় ঘটে তখন তার জন্য পুরো অর্থনীতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়। এবারের নোবেল পুরষ্কার অনেক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি বার্তা বহন করে এনেছে।'

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

8h ago