দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় প্রথম বিদেশি অপারেটর নিয়োগ

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর,
চট্টগ্রাম বন্দর। স্টার ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নবনির্মিত কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় সৌদিভিত্তিক বিদেশি অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা।

সৌদি প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম বিনিয়োগকারী সাসটেইন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার হোল্ডিং কোম্পানির একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) যন্ত্রপাতি সংযোজন ও উন্নয়নে প্রায় ১৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।

আরএসজিটিআই ২২ বছরের জন্য কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে অবস্থিত পিসিটি পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সফররত সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ ইতিবাচক পথে আছে। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। পতেঙ্গা টার্মিনাল তাই দ্রুত বর্ধনশীল আমদানি ও রপ্তানি বাজারকে কেন্দ্র করে প্রত্যাশিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে প্রতি বছর সাত শতাংশ।

আরএসজিটিআই জেদ্দা বন্দরে সৌদি আরবের বৃহত্তম টার্মিনালের অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের (আরএসজিটি) একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

ব্যবসায়ী, বন্দর ব্যবহারকারী ও বন্দর কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এটি নতুন টার্মিনালটি পণ্য ও জাহাজ পরিচালনায় আধুনিক ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করবে।

তারা মনে করেন, এটি অন্যান্য স্থানীয় বেসরকারি অপারেটরদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষেন দক্ষতা বাড়াতে উত্সাহিত করবে।

প্রায ৩২ একর জমির ওপর নির্মিত তিনটি ২০০ মিটার জেটি লম্বা ও আরও একটি ২২০ মিটার ডলফিন জেটি সম্বলিত টার্মিনালটি মোহনার কাছাকাছি কম সময়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বার্ষিক ৫ লাখ একক কনটেইনার পরিবহনের সক্ষম এই টার্মিনালে  টার্মিনালে ১০ থেকে ১১ মিটার ড্রাফটযুক্ত তিনটি জাহাজ একবারে ভিড়তে পারবে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, জেদ্দা বন্দর ও অন্যান্য টার্মিনাল পরিচালনায় খ্যাতি অর্জনকারী আরএসজিটিআই তাদের দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞান দিয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে।

এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আরও দক্ষ হবে এবং আন্তর্জাতিক মান পূরণ হবে।

তিনি আরও বলেন, ফলে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে কমলে আমাদের অর্থনীতি লাভবান হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, পিসিটি বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে এবং দেশের ব্যবসায়ীদের বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ও সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পিসিটি পরিদর্শনে যান।

এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সৌদি মন্ত্রী বলেন, আমাদের বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে সৌদি আরবের বাণিজ্যিক উপস্থিতির সূচনা হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। খুব অল্প সময়ের মধ্যে টার্মিনালটি যন্ত্রপাতিতে ভরে উঠবে।

খালিদ এ আল-ফালিহ বলেন, এটি কেবল বড় কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর একটি কেন্দ্র। আমরা আশা করি আমাদের সৌদি শিপিং কোম্পানি বাহরি এখানে আরও বেশি রপ্তানি করবে। বৈশ্বিক শিপিং লাইনের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক আছে তার মাধ্যমে এই বন্দরে অনেক কনটেইনার পরিবহন হবে।

তিনি বলেন, সৌদি আরব একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পাওয়ার প্রক্রিয়ায় মধ্যে আছে, যা সৌদি থেকে কৌশলগত পণ্যের জন্য একটি অগ্রগামী ক্ষেত্র হবে।

সৌদি আরব বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশে সৌদি বিনিয়োগের একটি বড় ক্ষেত্র জ্বালানি খাত। আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, অবকাঠামো, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্রযুক্তি, ডাটা সেন্টার, ক্লাউড কম্পিউটিংসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করার বিষয়টি বিবেচনা করছি।

তিনি বলেন, সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।

শীর্ষস্থানীয় ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ এম তানভীর বলেন, আমদানি-রপ্তানি হ্যান্ডলিং সময় কমানোর মাধ্যমে দেশের বন্দর কার্যক্রম উন্নত হবে।

তিনি বলেন, এই উদ্যোগ অন্যান্য টার্মিনাল অপারেটরদের পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন এবং সামগ্রিকভাবে তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, এর মাধ্যমে বন্দরে সুস্থ প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে।

তিনি বলেন, যেহেতু বিদেশি অপারেটররা আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করবে এবং পিসিটিতে উন্নত সেবা নিশ্চিত করবে, তাই বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে অন্যান্য টার্মিনালে ওই ধরনের উন্নত সরঞ্জাম ও সেবা নিশ্চিত করতে বাধ্য হবে।

(প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

12h ago