বিশ্লেষণ

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে কেন পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি

সার্বিক পরিস্থিতির কারণে একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি গত দুই বছর ধরে কমছে। যদিও অন্যান্য দেশ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীন ইউএস অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য বলছে, দেশটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৭২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। আগের বছরের তুলনায় তা শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ছয় দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। তারপরও, রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। বিশেষ করে, ২০২৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ২৫ শতাংশ কম হয়।

প্রশ্ন ওঠে, প্রতিযোগী দেশগুলো কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বাড়িয়ে তুলছে এবং দেশটির বাজারে তৃতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নিচ্ছে কেন?

কারণগুলো উদঘাটন করতে হলে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।

গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে ছিল। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ৫৩ শতাংশের বেশি বেড়ে গেলে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ নয় দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার হয়।

এই অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি মূলত করোনা মহামারির বিধিনিষেধের পরে হয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো ২০২২ সালের বাড়তি চাহিদা মেটাতে আরও পোশাক আমদানি করে।

তবে, পরের বছরগুলোয় রপ্তানি একই গতিতে এগোয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর অবিক্রীত পোশাক জমে যায়। ফলে প্রবৃদ্ধির হার কমে গিয়েছিল।

তাছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপসহ মহামারির সময়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় গত দুই বছর মার্কিন খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর পোশাক আমদানি কম ছিল।

বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক চীনও এই পরিস্থিতিতে পড়ে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে চীনের পোশাক রপ্তানি শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ কমে ১৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার হয়।

একই সময়ে তুরস্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ছয় দশমিক ৭৭ শতাংশ কমে আট দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার দাঁড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।

এসব দেশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে পুঁজি করে। গত বছরের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। মাসব্যাপী বিক্ষোভ ও সরকার পতনের পর শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানা বন্ধের পাশাপাশি পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়।

যেমন, গত বছরের জানুয়ারি-নভেম্বরে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি চার দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়ে চার দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার হয়।

গণঅভ্যুত্থানের পর কয়েকটি কার্যাদেশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। বাংলাদেশে রপ্তানিকারকরা সময়মতো পণ্য পাঠাতে বা নতুন কার্যাদেশ নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না।

একইভাবে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ছয় দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে হয় এক দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।

চীনের পর যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি চার দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। গত ১১ মাসে তা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

পণ্যের বেশি দাম সত্ত্বেও সুশৃঙ্খল সরবরাহ ব্যবস্থার ফলে ভিয়েতনাম খারাপ সময়েও ভালো করে।

কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে—ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা অর্ধেক দাম পেয়ে থাকেন। যেমন, ভিয়েতনামে উৎপাদিত একটি টি-শার্ট যদি ১০ ডলার পায়, বাংলাদেশে তৈরি একই টি-শার্ট মাত্র পাঁচ ডলার নেয়।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইন্দোনেশিয়ার বস্ত্র ও পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসায় দামি পোশাক উৎপাদনে দেশটি সক্ষমতা বাড়িয়েছে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে তিন দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার হয়।

তবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের আশা—চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন উচ্চহারে শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে এ দেশের পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে।

এনভয় টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতিমালা অনুসারে চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ ও বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকদের ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি পুনরুদ্ধার হচ্ছে।'

ট্রাম্প যদি চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেন তাহলে তা ৬০ শতাংশের মতো হতে পারে। এতে বাংলাদেশ অবশ্যই লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।

মেক্সিকান পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপও বাংলাদেশকে লাভবান করতে পারে।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, ক্যালিফোর্নিয়ায়।

২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া 'যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি'র আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা ভোগ করতে চীনা উদ্যোক্তারা মেক্সিকোর টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে বিনিয়োগ করায় এমনটি হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshis worry amid US immigration crackdown

The United States has deported at least 31 Bangladeshis after President Donald Trump took a tough immigration policy.

5h ago