আশুলিয়ায় শ্রমিক-যৌথবাহিনীর সংঘর্ষে গুলি, নিহত ১
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকায় শ্রমিক ও যৌথবাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
সেসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা যৌথবাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের টঙ্গাবাড়ী এলাকায় মন্ডল গ্রুপের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিকের নাম কাউসার হোসেন খান (২৬)। তিনি ম্যাঙ্গোটেক্স লিমিমিটেডের অপারেটর ছিলেন।
গুলিবিদ্ধরা হলেন—আশুলিয়ার ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবিব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান, শ্রমিক রাসেল ও নয়ন।
শ্রমিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ সকালে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক চলছিল। সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেন। পরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা সেখানে জড়ো হোন।
তারা আরও জানান, যৌথবাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে শ্রমিকরা র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। যৌথবাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরা আরও মারমুখী হয়ে উঠেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায়।
গুলি ও লাঠিচার্জে অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে শ্রমিকরা দাবি করেন।
ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক মো. সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ সকালে আমাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিলেন। আমাদের কারখানায় কোনো আন্দোলন হয়নি। মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়ে সেখানে যান। আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও যোগ দেন। যৌথবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের লাঠিচার্জ ও গুলি করেন। দুই জনের পায়ে গুলি লাগে। আমি তাদের একজনকে পিএমকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।'
আশুলিয়ার পিএমকে হাসপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুই শ্রমিক নাজমুল ও হাবিবকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়। আরও দুই আহত শ্রমিককে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শ্রমিক কাউসার, নয়ন ও রাসেলকে সাভারের এনাম মেডিকেলে আনা হলে চিকিৎসকরা কাউসারকে মৃত ঘোষণা করেন।
এনাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. এনামুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাউসারকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার তলপেটে গুলি লেগেছে। নয়নের বুকের বাম পাশে গুলি লেগেছে। রাসেলের বুকে গুলি লেগেছে। এগুলো ছররা গুলি নয়। আহত দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে।'
গুলিবিদ্ধদের এনাম মেডিকেলে নিয়ে আসা ম্যংগটেক্স কারখানার শ্রমিকরা ইকরামুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা আন্দোলন করছিলেন। আমাদের কারখানাটি মন্ডল গ্রুপের বিপরীত পাশে। আমরা কারখানা থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম। সেসময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা গুলি করেন। কাউসারসহ তিন গুলিবিদ্ধ শ্রমিককে এনাম মেডিকেলে নিয়ে আসলে ডাক্তাররা কাউসারকে মৃত ঘোষণা করেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়া শিল্প পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিল্প পুলিশের এসপি স্যারসহ অন্তত সাতজন সদস্য শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলে আহত হয়েছেন। শ্রমিকদের কে গুলি করেছে এটা বলতে পারবো না।'
আশুলিয়া শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম দ্য ডেইলি স্টারকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ নিশ্চিত করেছেন, তিনি গুরুতর আহত হয়ে সিএমএইচে ভর্তি আছেন।
Comments