টায়ারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উৎপাদন বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো

টায়ারের দাম
টায়ার কোম্পানিগুলো আগামী তিন মাসের মধ্যে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি পূরণ করতে চাইছে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় গাজী টায়ারের কারখানায় হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে গাজী টায়ারের কারখানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাজারে যেন টায়ারের সরবরাহ ঘাটতি তৈরি না হয় সেজন্য উৎপাদন বাড়াতে শুরু করেছে অন্যান্য টায়ার কোম্পানিগুলো।

রিকশা, তিন চাকার যান ও ছোট বাণিজ্যিক যানবাহনে ব্যবহৃত টায়ারের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করত গাজী টায়ার। এছাড়া বাস ও ট্রাকের টায়ারের বাজারের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং মিনিবাসের ৬৫ শতাংশ টায়ারের চাহিদা গাজী পূরণ করত।

তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গাজী টায়ারের কারাখানা বারবার লুট ও অগ্নিসংযোগকারীদের হামলার শিকার হয়। কারণ কোম্পানিটি সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন।

কারখানাটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তাই অন্য টায়ার কোম্পানিগুলো আগামী তিন মাসের মধ্যে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি পূরণ করতে চাইছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা দেশের বার্ষিক চাহিদার দ্বিগুণেরও বেশি পূরণ করতে পারবে।

এই খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এপেক্স হোসেন টায়ার, রূপসা টায়ার্স অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেড ও আলম টায়ার।

মেঘনা গ্রুপের ডিরেক্টর অব অপারেশনস লুৎফুল বারী বলেন, 'আমরা বিভিন্ন টায়ারের মার্কেট শেয়ার বাড়াতে সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করব। আমরা ছোট টায়ারের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পূরণ করতে পারব।'

বিশেষ করে মেঘনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এমটিএফ টায়ারসের কতা বলেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'আগে আমরা উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ব্যবহার করতাম। এখন আমরা শতভাগ ব্যবহার করব, কারণ বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় এটিই উপযুক্ত সময়।'

তিনি জানান, তারা প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ রিকশা টায়ার উৎপাদন করতে পারে।

তার মতে, এমটিএফ টায়ার ইতোমধ্যে মোটরসাইকেলের টিউব ও টায়ারের চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করছে। কিন্তু এখন এই খাতে কোম্পানির মার্কেট শেয়ার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

তিনি আরও বলেন, 'বাজারের অধিকাংশ চাহিদা মেটানোর জন্য এমটিএফ টায়ার একাই যথেষ্ট।'

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার সিএনজি টায়ার ও ৩৫ হাজার মোটরসাইকেল টায়ারের প্রয়োজন হয়। দুই ও তিন চাকার যানবাহনের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

লুৎফুল বারী মনে করেন, গাজী টায়ারের অনুপস্থিতিতে এমটিএফ টায়ারের মতো এ শিল্পের অন্যান্য নির্মাতারাও উৎপাদন বাড়াবে।

রূপসা টায়ারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান জানান, সরবরাহ ঘাটতি মেটাতে তারা আগামী তিন মাস উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াবে।

তিনি আরও জানান, তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য শিগগির ঋণপত্র খুলবেন।

তিনি বলেন, 'এরপর প্রয়োজনীয় কাঁচামালও আমদানি করব।'

শফিকুর রহমান বলেন, তারা সিএনজি, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক টায়ারের প্রায় ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এছাড়া বাস ও ট্রাকের টায়ার বাদে বাজারের সামগ্রিক চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম।

'দেশীয় কোম্পানিগুলো এখন দুই ও তিন চাকার গাড়ির জন্য আন্তর্জাতিক মানের টায়ার উৎপাদন করতে পারবে। তবে সেসব পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে কিছু কাঁচামাল আমদানি করতে হয়,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'মোটরসাইকেলের টায়ারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে আমরা উন্নতমানের রাবার শিট আমদানি করি।'

স্থানীয়ভাবে তৈরি টায়ারের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি করা টায়ারের চেয়ে দেশীয় পণ্য সস্তা হলেও মান এক।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, তারা মাত্র তিন বছর আগে টায়ার শিল্পে প্রবেশ করেছে, এ কারণে তাদের মার্কেট শেয়ার অনেক কম।

তিনি জানান, যখন কোনও বড় কোম্পানি হঠাৎ ধাক্কা খায়, তখন বাজারে শূন্যতা তৈরি হয়। এতে অন্যরা ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ পায়।

'তবে বাজারে সংকট তৈরি না হওয়ায় উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। বাজারে সরবরাহ ঘাটতির প্রভাব পড়তে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।'

'আমরা যদি দেখি বাজারে চাহিদা বেশি, তাহলে আমরা উৎপাদন বাড়াব,' বলেন তিনি।

কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, তারা তাদের বিদ্যমান উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে টায়ারের মোট চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম।

 

Comments

The Daily Star  | English
conflict over security responsibilities at Dhaka airport

Dhaka airport: APBn at odds with aviation force over security duties

A conflict has emerged between the Aviation Security Force (AVSEC) and the Airport Armed Police Battalion (APBn) over security responsibilities at Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA). APBn claims that AVSEC took control of their office on October 28, hindering their ability to perform duties effectively

1h ago