হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়ছে পর্যটনে

পর্যটন
হরতাল-অবরোধের কারণে বেশি ছাড়ের পাশাপাশি নানান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও পর্যটনের ভরা মৌসুমে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। ছবি: লালটান পাংখোয়া/স্টার

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিরোধীদলগুলো দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধ দেওয়ায় সহিংসতার ভয়ে মানুষ ভ্রমণ করতে অনিচ্ছুক বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এমন পরিস্থিতিতে বেশি ছাড়ের পাশাপাশি নানান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও পর্যটনের ভরা মৌসুমে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না।

যেমন—হোটেল-রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখন গ্রাহকহীন। চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদের লোকসান আগামীতে আরও বাড়বে।

নেতাকর্মীদের হত্যা-গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত ৩১ অক্টোবর থেকে বিএনপি সারা দেশে তিন দিনের অবরোধ পালন করে। গত রোববার ও সোমবারও দলটি অবরোধের ডাক দেয়।

বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবারও অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এসব অবরোধের ডাক দেওয়া হচ্ছে।

দেশে পর্যটন মৌসুম সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। শীতের মাসগুলোয় থাকে ভরা মৌসুম।

প্রায় ৫০০ হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট ছাড়াও দুই হাজারেরও বেশি খাবারের দোকান নিয়ে কক্সবাজার দেশের শীর্ষ পর্যটন স্থান।

পর্যটন
কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন প্রবালদ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের প্রাসাদ প্যারাডাইস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের কর্পোরেট সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার ইমাম-আল-রাজি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মৌসুমের শুরুতে বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, 'বাসে আগুন দেওয়ায় মানুষ ভ্রমণ করতে ভয় পাচ্ছেন। আমরা বড়মাপের ছাড় ও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিলেও অবরোধের মধ্যে পর্যটক পাচ্ছি না।'

প্রাসাদ প্যারাডাইসের কটেজসহ ১০০টিরও বেশি কক্ষ থাকলেও গত শুক্র ও শনিবার এর প্রায় ৮৫ শতাংশ বুকিং বাতিল করা হয়।

তিনি জানান, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ২০২০-এর তথ্য অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল তিন শতাংশ।

এ ছাড়াও, সেই বছর এই খাতে মোট কর্মসংস্থান ছিল চার শতাংশ।

কক্সবাজারের সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার আছে ৪৮২টি কক্ষ। গত সপ্তাহান্তে এর ৭০ শতাংশের বুকিং ছিল।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের পরিচালক আব্দুল আউয়াল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে রুম বুকিংগুলো বাতিল হয়ে যাবে।'

কক্সবাজারের সিগাল হোটেলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী নাসিরউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায় মন্দা চলছে। আগামী সপ্তাহান্তের কিছু বুকিং বাতিল হয়ে যায় কিনা তা নিয়ে আতঙ্কে আছি।'

পর্যটন
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান পরিস্থিতিতে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, কুয়াকাটার হোটেল ও রিসোর্টগুলোয় আগামী শুক্র ও শনিবারের জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ রুম বুকিং বাতিল হয়েছে। আগামী সপ্তাহান্তের জন্য কোনো রুম বুক করা হচ্ছে না।

'কুয়াকাটা গেস্ট হাউজের ২২টি কক্ষে ৭০ জন থাকতে পারেন' উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোতালেব শরীফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঝুঁকি নিয়ে কেউ ভ্রমণে যেতে আগ্রহী না হওয়ায় বর্তমানে একজন পর্যটকও নেই।'

কুয়াকাটায় প্রতি বছরই পর্যটকদের ঢল নামে, হোটেল-মোটেলগুলোয় কোনো কক্ষ খালি পাওয়া যায় না। তবে এ বছর মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের অভাব দেখা দিয়েছে।

কুয়াকাটা বিচ রেসিডেনশিয়াল হোটেলের ৪০টি কক্ষের মধ্যে ২০টির গত সপ্তাহে প্রি-বুকিং হলেও গত বৃহস্পতিবার ১৫টি কক্ষের বুকিং বাতিল করা হয়।

কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার হোটেলগুলোর বুকিং ৭০ শতাংশে পৌঁছে।'

তিনি আরও বলেন, 'অন্তত পাঁচ হাজার স্থানীয় মানুষ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ অঞ্চলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে।'

একইভাবে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলোতেও তেমন কোনো পর্যটক আসছেন না।

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার হোটেল সাংহাই ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রনি ডেইলি স্টারকে জানান, বর্তমানে তাদের হোটেলে একজনও পর্যটক নেই।

তিনি বলেন, 'গত সপ্তাহান্তে প্রায় ৩০ শতাংশ রুম বুকিং হওয়ার পর তা বাতিল হয়ে যায়।'

একই এলাকার মতি মহল হোটেলের ব্যবস্থাপক চন্দন দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ৮০ শতাংশ রুম বুক করা হলেও এমন পরিস্থিতিতে সেগুলো বাতিল করা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বছরের একই সময়ে হোটেলটি শতভাগ বুকড ছিল। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা মারাত্মক ক্ষতিতে পড়বো।'

সাজেক হিল ভিউ রিসোর্টের মালিক ইন্দ্র চাকমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমিও একই পরিস্থিতিতে পড়েছি।'

বান্দরবান সদর উপজেলার হিলসাইড রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রয়েল বম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের রিসোর্টে ৬৫ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত শুক্র ও শনিবার ২৫ জন বুকিং করেছিলেন। পরে তারা তা বাতিল করে দেন।'

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago