লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরী: ১০৭ প্লটের মধ্যে ৩২ বছরে চালু ৬১

১৯৮৭ সালে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নে ১৫ একর ৬০ শতাংশ জমি কেনা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) জন্য। ১৯৯০ সালে শুরু হয় এর কার্যক্রম।
প্লট ফাঁকা : লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরী: ১০৭ প্লটের মধ্যে ৩২ বছরে চালু ৬১
লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরীর ১০৭ প্লটের মধ্যে ৪৬ প্লট ফাঁকা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

১৯৮৭ সালে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নে ১৫ একর ৬০ শতাংশ জমি কেনা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) জন্য। ১৯৯০ সালে শুরু হয় এর কার্যক্রম।

এখনো পর্যন্ত প্রাণবন্ত হতে পারেনি শিল্পনগরীটি। যে কয়েকজন উদ্যোক্তা এই শিল্পনগরীতে কারখানা শুরু করেছিলেন তারাও ধীরে ধীরে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।

এখানে আছে আটা-ময়দা ও আইসক্রিম তৈরির কারখানা, বেকারি, হিমাগার, কাঠের আসবাবপত্রের দোকান ও ভুট্টার গুদাম।

কারখানার মালিকদের অভিযোগ, এখানে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প বলতে কিছুই নেই। একে শিল্পবান্ধব করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি।

তবে এখানে পলিথিন রিসাইক্লিং ও প্লাস্টিকের সুতা তৈরির ব্যবসা জমজমাট বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরী সূত্র ডেইলি স্টারকে জানায়, এখানে 'এ', 'বি' ও 'সি' ক্যাটাগরিতে ১০৭ প্লট আছে। 'এ' ক্যাটাগরি প্লটে জমির পরিমাণ ১০ শতাংশ, 'বি' ক্যাটাগরিতে ৫ শতাংশ ও 'সি' ক্যাটাগরিতে ৩ শতাংশ।

প্লট ফাঁকা : লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরী
লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরীতে পলিথিন রিসাইক্লিং ও প্লাস্টিকের সুতা তৈরির ব্যবসা জমজমাট। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

প্রতি শতাংশ জমির দাম ধরা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৯০ প্লট বিক্রি হলেও চালু হয়েছে ৬১টি।

শিল্প উদ্যোক্তা আফজাল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৬ বছর আগে এখানে "এ" ক্যাটাগরির ৩ প্লট নিয়ে তারকাঁটা উৎপাদন শুরু করি। কিন্তু, সেগুলো বিক্রি করতে পারিনি। চীনা পণ্যের কারণে আমাদের তারকাঁটা বিক্রি না হওয়ায় এক বছর আগে কারখানা বন্ধ করে দিই।'

'পুঁজি হারানোয় নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারছি না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বিসিক শিল্পনগরী থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করলেও তা পাইনি। কর্মকর্তারা উদ্যোক্তাবান্ধব আচরণ করেননি।'

'অল্প পুঁজি দিয়ে প্লাস্টিকের সুতা তৈরির কারখানা চালু করতে চেয়েছিলাম। কর্মকর্তারা রাজি হননি। প্লট ছেড়ে দেওয়া প্রস্তুতি নিচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

উদ্যোক্তা তানভির ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিসিক শিল্পনগরীতে "এ" ক্যাটাগরির প্লট নিয়ে চারকোল কারখানা গড়েছিলাম। পুঁজির অভাবে ব্যবসা স্থায়ী করতে পারিনি। বিসিক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাইনি। কারখানা বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্লটটি বাতিল করেছে।'

উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ও প্লাস্টিক সুতা তৈরির কারখানা চালাচ্ছি। ভালোই চলছে। এখানে আরও কয়েকজন একই ধরনের ব্যবসা করছেন। আমার কারখানায় পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে সেগুলো ঢাকায় পাঠাই। প্লাস্টিকের সুতা স্থানীয় বাজারেও বিক্রি করছি।'

উদ্যোক্তা সফিয়ার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেখানে-সেখানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের স্তূপ। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সুস্থ পরিবেশ পাওয়া কষ্টকর। বিসিক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।'

তিনি জানান, লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরীতে অনেক উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়েছেন।

লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনো অনেক প্লট বিক্রি হয়নি। অনেক প্লট অব্যবহৃত। এখানে কারখানা করতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। যেসব কারখানা চালু হয়েছে সেগুলো বাস্তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় পড়ে না। অনেকে প্লট বরাদ্দ নিয়ে ভুট্টা-ধান-চাল রাখার গুদাম বানিয়েছেন।'

'উদ্যোক্তা না আসায় এসব ব্যবসায়ীদের বিসিকের শর্ত মানতে তাগিদও দেওয়া যাচ্ছে না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'যেসব প্লট বিক্রি হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশের কিস্তি বাকি। ৯০ লাখেরও বেশি টাকা বকেয়া। ব্যবসায়ীরা কিস্তি দিতে আগ্রহী নন।'

'উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট বিসিকের ডেপুটি ম্যানেজার এহেছানুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায়ীরা শিল্পনগরীর শর্ত না মেনে নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। যেসব প্লট এখনো বরাদ্দ হয়নি সেগুলোয় ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি।'

'বিসিকের শর্ত পূরণ না হলে কাউকে ঋণ দেওয়া যাবে না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ব্যবসা বন্ধ রাখা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্লট বাতিলের কাজও চলছে।'

'বিসিকের শর্ত মেনে কারখানা করলে অবশ্যই সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago