ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এক কাগুজে প্রতিষ্ঠান

ইসলামী ব্যাংক

শুধু কাগজে-কলমে থাকা একটি কোম্পানি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, তাও আবার মাত্র দুই দিনের মধ্যে।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মার্কেট মাস্টার অ্যানালাইজার লিমিটেড ২০২২ সালের ১০ আগস্ট ৪৫০ কোটি টাকা এবং পরদিন ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের গুলশান-১ শাখা ব্যাংকিং নীতিমালা উপেক্ষা করে এ ঋণ বিতরণ করেছে।

২০২২ সালের ৬ জুলাই রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত হওয়ার মাত্র এক মাস পর মার্কেট মাস্টার অ্যানালাইজার এই বিশাল ঋণ পেয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ছিল মাত্র পাঁচ কোটি টাকা।

আরজেএসসির রেকর্ডে কোম্পানির ঠিকানা দেখানো হয়েছে ঢাকার বনানী। তবে এই প্রতিবেদক ওই ঠিকানায় গিয়ে এ ধরনের কোনো কোম্পানির সন্ধান পাননি। কেবল কাছাকাছি নাবিল গ্রুপের একটি অফিস ছিল।

মার্কেট মাস্টার এনালাইজারের মালিক হিসেবে দুইজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান মো. শরিফুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহ আলম।

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, শরিফুল ইসলাম নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের কাছের আত্মীয়।

অন্যদিকে মো. শাহ আলম নাবিল গ্রুপের রাজশাহী অফিসে জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত। তার কাছে এই কোম্পানির কার্যক্রম বা কীভাবে এত বড় ঋণ পেল, জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো বিবরণ দিতে রাজি হননি।

মার্কেট মাস্টার অ্যানালাইজারের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'নাবিল গ্রুপের ১৩ হাজার কর্মী বা আমার কোনো আত্মীয়-স্বজনের কেউ ঋণ নিলে সেই দায় আমার না।'

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এই প্রতিবেদককে ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভূমিকা

এক সময়ের স্বনামধন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে শোষণ করেছে, ইসলামী ব্যাংক তার উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের ৮৭ শতাংশ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ ও তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সহযোগী নাবিল গ্রুপ।

এই ঋণের বেশিরভাগ শতাধিক ছায়া কোম্পানির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যথাযথভাবে যাচাই করা হলে মার্কেট মাস্টার অ্যানালাইজার কখনো এত বড় ঋণ নিতে পারত না।

এই ঋণ বিতরণের সময় ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম গুলশান-১ শাখার প্রধান ছিলেন। পরে তাকে দিলকুশার ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেট শাখায় বদলি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি কেবল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশাবলী মেনে চলেছি।'

এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী ব্যাংকের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন। তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মওলা ব্যক্তিগতভাবে শাখা ব্যবস্থাপককে ফোন করে দ্রুত ঋণ অনুমোদনের নির্দেশ দেন। ফলে স্ট্যান্ডার্ড ভেরিফিকেশন পদ্ধতি এড়িয়ে তড়িঘড়ি করে ঋণ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে মনিরুল মওলার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে ও হোয়াটসঅ্যাটে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এই প্রতিবেদক মনিরুল মওলার সঙ্গে দেখা করতে গত এক মাসে বেশ কয়েকবার মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যান। কিন্তু দেখা করতে পারেননি।

বক্তব্যের জন্য ইসলামী ব্যাংকের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন নজরুল ইসলামকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে বলা হয়। তবে মুখপাত্র বলেন, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

এদিকে প্রতারণার মাধ্যমে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে, তার মধ্যে মনিরুল মওলা একজন।

মামলার অন্য আসামির মধ্যে আছেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম ও এস আলম পরিবারের সদস্যরা।

অন্যদিকে যৌথ টাস্কফোর্সের তদন্তাধীন ১০টি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপের মধ্যে নাবিল গ্রুপও রয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বিএফআইইউ।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

6h ago