ঋণ আদায়ে অ্যাননটেক্সের বন্ধকি সম্পদ বিক্রি করবে জনতা ব্যাংক

জনতা ব্যাংক, অ্যাননটেক্স গ্রুপ, অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ, জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ,

পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিমরান কম্পোজিট লিমিটেডের বন্ধকি সম্পদ নিলামে তুলে এক হাজার ১৬০ কোটি টাকা মন্দ ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে জনতা ব্যাংক।

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি হিসেবে বছরের পর বছর ধরে খবরের শিরোনাম হয়ে আসছে অ্যাননটেক্স। তবে এই প্রথম কোনো ব্যাংক অ্যাননটেক্স গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলতে যাচ্ছে।

সুদসহ খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালত আইনে আগামী ২৯ ডিসেম্বর নিলামের দিন নির্ধারণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির জনতা ভবন করপোরেট শাখা।

এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুর ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত অ্যাননটেক্স গ্রুপের সম্পত্তি জনতা ব্যাংকে বন্ধক রাখা আছে।

এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ আছে জনতা ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জনতার বিতরণ করা ঋণের ৬১ শতাংশ খেলাপি এবং ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশ দেশের বড় ঋণগ্রহীতারা কাছে পাওনা। এর মধ্যে বেক্সিমকোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ গ্রুপের পাওনা ১৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, এস আলম গ্রুপের ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং অ্যাননটেক্স গ্রুপের সাত হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে চরম বিপাকে পড়ায় বড় ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ।

এই কর্মকর্তা বলেন, খেলাপিদের বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করার সিদ্ধান্তটি এই ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টার অংশ।

গত মাসে এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের বন্ধকি সম্পদ নিলামের মাধ্যমে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা আদায়ের ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংকটি।

এ বিষয়ে জানতে টেলিফোন ও খুদে বার্তার মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবুর রহমান ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুস বাদলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল দ্য ডেইলি স্টার। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় তিন হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক।

সুদসহ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। শুধু তাই নয় ব্যাংক কোম্পানি আইনের একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা লঙ্ঘন করে অ্যাননটেক্স গ্রুপকে ঋণ দিয়েছে জনতা।

জনতা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অ্যাননটেক্স গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ সাত হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে জনতা ব্যাংকের ঋণ অনুমোদনে ব্যাপক অনিয়ম উদঘাটিত হওয়ার পর ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০১৮ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকটিকে ফাংশনাল অডিট পরিচালনা এবং কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

তবে ব্যাংকটি এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি।

চলতি বছরের মার্চে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এককালীন ঋণ পরিশোধের ওপর নির্ভর করে অ্যাননটেক্স গ্রুপের তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফের অনুমোদন দিয়েছিল।

এছাড়া আশুলিয়া ও টঙ্গীতে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করে মূল ঋণের চার হাজার ৯৬০ কোটি টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্যাংকটি।

তবে নিরীক্ষায় ঋণ নিয়ে জালিয়াতি ও কেলেঙ্কারির প্রমাণ পাওয়ায় চলতি বছরের এপ্রিলে জনতা ব্যাংককে তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিলের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Comments

The Daily Star  | English

What are the factors leading to labour migration from Bangladesh?

A father of one, Fahimuzzaman said that his income in Bangladesh did not allow him to build any savings

1h ago