ব্যাংকখাতে সুশাসন ফেরানোর প্রথম ধাপ দুর্বল ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন

বাংলাদেশ ব্যাংক, আহসান এইচ মনসুর, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, গভর্নর,
আহসান এইচ মনসুর

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার এ কথা বলেন তিনি।

গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছে। বিশেষ করে যে ব্যাংকগুলোতে এস আলম গ্রুপের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার ছিল।

এর আগে, গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তিনি আবদুর রউফ তালুকদারের স্থলাভিষিক্ত হন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন আবদুর রউফ তালুকদার।

এ পর্যন্ত যেসব ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে তার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ৮০ শতাংশ শেয়ার আছে।

গভর্নর বলেন, 'এসব ব্যাংকের দায় বাবদ এস আলম গ্রুপের শেয়ার বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।'

এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও পুনর্গঠন করা হয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর জানান, যেসব ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো প্রাথমিক বোর্ড। পরে এগুলোতে উদ্যোক্তা বা স্পন্সর পরিচালক দেওয়া হবে।

এস আলমের শেয়ার বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এতে নতুন স্পন্সর পরিচালকরা পরিচালনা পর্ষদে আসতে পারবেন। নতুন স্পন্সর পরিচালক দেশ কিংবা বিদেশের থেকে আসতে পারেন। সব বিনিয়োগকারীর জন্য শেয়ার কেনার সুযোগ থাকবে।'

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এটাও বলেছেন, কেবল যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিরা যেন এই পদে বসতে পারেন তা নিশ্চিত করতে তারা কাজ করবেন।

'দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য স্পন্সর পরিচালক হিসেবে সৎ লোক প্রয়োজন।'

তার ভাষ্য, 'দরকার হলে এস আলমের মতো ঋণগ্রহীতা বা পরিচালকদের সম্পদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।'

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষ বিদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবে।'

এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সহায়তা করতে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতাও চাইব।'

'যতটুকু অর্থ ফেরত আনা সম্ভব আমরা আনব। এগুলো হাতছাড়া করব না।'

এছাড়া বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'আমরা কিছুটা স্বস্তির জায়গা তৈরি করতে বিদেশি ঋণের কথা ভাবছি। এই অর্থ পেতে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করেছি।'

বাংলাদেশ অতিরিক্ত বাজেট সহায়তা, খাতভিত্তিক সহায়তা ঋণ বা কর্মসূচি ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে।

'এছাড়া আমরা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। আমরা আশাবাদী তারা আমাদের রিজার্ভ পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

গত তিন বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। কারণ ডলার আয়ের চেয়ে ব্যয় হয়েছে বেশি।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, প্রথম সমস্যা হলো ব্যয়, দ্বিতীয় সমস্যা সারাদেশের বন্যা।

'দেশে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে, যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা কেবল চাহিদার দিকটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে পারি। নতুন সরকার সেই চেষ্টাই করছে।'

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, আইএমএফ ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুযায়ী গত মে মাস থেকে ব্যাংকের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। আগের সরকার সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা সরাতে বাধ্য হয়েছিল। একইসঙ্গে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছিল।

এরপর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার আগের চেয়ে স্থিতিশীল হয়েছে বলে জানান তিনি।

'আমি আশাবাদী, বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্যে অস্থিরতা না থাকায় বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে।'

প্রবাসী আয় প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ইতিবাচক। আগামীতে এটি টেকসই হয় কিনা তা তারা পর্যবেক্ষণ করবেন।

তিনি বলেন, 'চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে যে প্রবাসী আয় এসেছে তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি।'

Comments

The Daily Star  | English

Are battery-run rickshaws Dhaka’s newest traffic menace? Hear what city dwellers think!

Dhaka's battery-run rickshaws spark debate over efficiency versus safety. Critics cite accidents, recklessness, and safety concerns, while supporters highlight cost-effectiveness. A High Court ban fuels tensions, affecting livelihoods and intensifying calls for regulation over elimination.

2h ago