৩১ ব্যাংকের সুদ আয় বেড়েছে ২৭০০ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বাংলাদেশের কোটিপতি,

বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার পর চলতি বছরের প্রথমার্ধে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর সুদ আয় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেড়েছে।

এদিকে ব্যাংকগুলো শেয়ারে বিনিয়োগ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে মোটা অঙ্কের প্রভিশন রাখার পরও ট্রেজারি বন্ড ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়াতে সহায়তা করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এ যাবতকালে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

সম্প্রতি তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৩১টি আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি-জুন এই ছয় মাসে তাদের মোট সুদ আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেড়ে ১৩ হাজার ৪৫ কোটি টাকা হয়েছে।

এর মধ্যে বিনিয়োগ থেকে, বিশেষ করে সরকারি বিল ও বন্ড থেকে ব্যাংকগুলোর আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেড়ে ১০ হাজার ৯২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাজারভিত্তিক করায় ব্যাংকগুলোর সুদ আয় বেড়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে ছয় মাসের মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল (স্মার্ট) বাতিল করে প্রায় চার বছর পর আবারও বাজারভিত্তিক সুদহারে ফিরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে, গত বছরের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয় শতাংশ সুদের সীমা প্রত্যাহার করে এবং আইএমএফের চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ নিশ্চিত করতে স্মার্ট সুদহার চালু করে।

এদিকে ঋণের সুদ বাড়ায় বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের অব্যাহত ঋণের মধ্যে অনেক ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড ও বিলে বিনিয়োগের পথ বেছে নিয়েছে।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'এজন্য আমরা বিনিয়োগ থেকে ভালো মুনাফা করতে পেরেছি।'

অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে বেশি প্রভিশন রাখায় মুনাফায় শ্লথগতি দেখছে ব্যাংকগুলো। জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকগুলোর সমন্বিত মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আট শতাংশ বেড়ে চার হাজার ১০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮১ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

উচ্চ প্রভিশনিং প্রসঙ্গে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ও শেয়ারে বিনিয়োগ করে লোকসানে পড়ায় এটা করতে হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তবে ব্যাংকগুলো যদি বেশি প্রভিশন রাখে, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে।'

চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ১০ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছরের জুন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বন্ড তুলনামূলকভাবে বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেক ব্যাংক ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করছে।

তিনি বলেন, 'ব্যাংকের জন্য এটি একটি স্মার্ট সিদ্ধান্ত (ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ)। কারণ এগুলো নিরাপদ ও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়।'

'এখানে বিনিয়োগ করলে খেলাপির কোনো ঝুঁকি থাকে না, তাই প্রভিশনিংয়ের প্রয়োজন হয় না,' বলেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'অন্যদিকে কোনো খাতে ঋণ দিলে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি নিতে হয়। তাই অশ্রেণিভুক্ত ঋণের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম প্রভিশন রাখতে হবে।'

বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বার্ষিক আয় বর্তমানে ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। একইভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মেয়াদের ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের সময় ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে হয় না। বরং এই প্রক্রিয়াটি সহজ এবং বলতে গেলে প্রায় কোনো খরচ নেই।

বিপরীতে ঋণ দিতে হলে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে হয় এবং ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়াতে খরচ আছে। কারণ বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে ঋণ বিতরণে একটি ক্রেডিট টিম প্রয়োজন এবং ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, 'তাই স্মার্ট ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং এর সুফল পেয়েছে।'

যেমন- ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের বিনিয়োগ আয় দ্বিগুণ হয়ে এক হাজার ১৯১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আয়।

বিনিয়োগ আয় দ্বিগুণ হওয়ায় ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেড়ে ৫৯১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এই ছয় মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক। এই সময়ে ব্যাংকটির আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩১ কোটি টাকায়।

কিন্তু একই সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।

Comments