রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ‘কাউন্টার ট্রেড’

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে কাউন্টার ট্রেড বাণিজ্য নীতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রপ্তানিকারক, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা তাদের অংশীদারদের সঙ্গে কাউন্টার ট্রেড চুক্তি করতে পারবেন।

কাউন্টার-ট্রেড মুদ্রার পরিবর্তে পণ্য ও সেবার বিপরীতে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পণ্য ও সেবার বিনিময়কে বোঝায়। বিটারিং কাউন্টার ট্রেডের প্রাচীনতম রূপ এবং বর্তমানে এর বিভিন্ন ধরণ আছে।

কাউন্টার ট্রেড ভারত ও অন্যান্য দেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি সুপরিচিত পদ্ধতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, দালিলিক প্রমাণের মাধ্যমে আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার আমদানি মূল্য থেকে এসক্রো অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট করা যাবে।

এসক্রো অ্যাকাউন্ট এমন একটি অ্যাকাউন্ট, যখন দুই বা ততোধিক পক্ষ একটি লেনদেন সম্পন্ন করে তখন এই অ্যাকাউন্টে অর্থ রাখা হয়।

একইভাবে, স্থানীয় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের দালিলিক প্রমাণের মাধ্যমে রপ্তানি অর্থ পরিশোধে এই অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট করা যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ব্যাখ্যা, কোনো আমদানিকারক বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনলে দায় তৈরি হয়। আমদানিকারক একই ফার্মে পণ্য রপ্তানি করলে দায় নিষ্পত্তি হয়।

এই লেনদেনে কোনো মুদ্রায় হবে না। তবে আমদানি-রপ্তানি পণ্য ও সেবার মূল্যায়ন মার্কিন ডলারের মতো বিদেশি মুদ্রার মাধ্যমে হবে। ফলে, তা ব্যালেন্স অব পেমেন্টে যুক্ত হবে।

তবে, রপ্তানি ও আমদানি পণ্যের মূল্য অভিন্ন হবে।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এবং গতকালের নীতিও তারই অংশ।

ডলার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় দেশের মোট রিজার্ভ চলতি বছরের ৬ মার্চ ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অথচ, ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, 'উন্নয়নশীল দেশগুলো বৈদেশিক লেনদেনে সমস্যার সম্মুখীন হলে পণ্য বা সেবা বিনিময় করে।'

'এই নীতি বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে,' বলেন তিনি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কাউন্টার ট্রেড ব্যবসায়ীদের জন্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পরিচালনায় একটি বিকল্প তৈরি করবে।

সাম্প্রতিক বছরে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার পর কাউন্টার ট্রেডের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নগদ অর্থ সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কা জানিয়েছিল, তারা ইরানের ২৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের তেলের ঋণ আংশিক পরিশোধ করতে ২ কোটি ডলারের চা রপ্তানি করেছে।

গত বছরের জুলাইয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তান, ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে বিনিময় বাণিজ্যের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান।

ভারত কাউন্টার ট্রেড চুক্তির অধীনে মালয়েশিয়া ও ইরানের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করত। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং চীনেও এই পদ্ধতির সফল উদাহরণ আছে।

তবে কাউন্টার ট্রেড ব্যবস্থায় জটিলতা আছে।

অনেক সময় পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি এবং সময়সীমা সমস্যা বলে জানান একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাই আধুনিক বাণিজ্যে এর তেমন অবদান নেই।

Comments

The Daily Star  | English

100 days of govt: Businesses seek high security, low interest

Weak law and order, high interest rates on bank loans, and slow bureaucracy remain big concerns for entrepreneurs despite many steps taken by the government in its first 100 days, business leaders said yesterday.

10h ago