ইসলামি ব্যাংকিং নীতিমালায় পরিবর্তন আসছে

শরিয়াহ কমিটিতে থাকতে পারবেন না ব্যাংকার ও পরিচালকরা

টাকা পে কার্ড চালু করল ৩ ব্যাংক
প্রতীকী ছবি

ইসলামি ব্যাংকিং নীতিমালায় সংশোধনী আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশোধনী অনুযায়ী, সুশাসন ও অনিয়ম রোধে ইসলামী ব্যাংকগুলোর শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটিতে ব্যাংকার ও পরিচালকরা কোনো পদে থাকতে পারবেন না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে সংশোধিত ইসলামি ব্যাংকিং গাইডলাইন চূড়ান্ত করেছে এবং খুব শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সাধারণত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ইসলামি নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলে কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি।

এছাড়াও, ঋণ অনিয়মের কারণে অনেক ব্যাংক আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক শরিয়াহ ব্যাংকিং তদারকিতে একটি পৃথক বিভাগ গঠনেও কাজ করছে।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইসলামি আইনশাস্ত্রে অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিয়ে শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন করতে হবে। কোনো ব্যাংকের ব্যাংকার ও পরিচালকের এ ধরনের জ্ঞান থাকলেও বোর্ডের পদে থাকতে পারবেন না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন এক সময়ে এই সংশোধনী আনছে যখন বেশিরভাগ ইসলামি ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডোগুলো শরিয়াহ নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করছে না। ফলে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রসার বাড়লেও ঋণ অনিয়মের কারণে কোনো কোনো ব্যাংক তীব্র তারল্য ঘাটতির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, 'শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটিতে ব্যাংকার ও পরিচালকরা আছেন। এটা স্বার্থের সংঘাত।'

তিনিবলেন, কমিটির সব সদস্যকে ইসলামি আইন সম্পর্কে জানতে হবে।

'শুধু গাইডলাইন সংশোধনই যথেষ্ট হবে না, কেউ গাইডলাইন অমান্য করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, বেশিরভাগ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে, কারণ তারা নিয়ম মানছে না।

নির্দেশনা সংশোধনের সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কমিটিতে ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা হবে তিনজন এবং সর্বোচ্চ সাতজন।

তবে, বর্তমানে কোনো কোনো ব্যাংকের কমিটিতে সাতজনের বেশি সদস্য আছে।

বেশ কয়েকজন সিনিয়র ব্যাংকার এই সংশোধনীর বিরোধিতা করেছেন, কারণ এই সংশোধনী কার্যকর হলে তাদের বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি এখনো সংশোধিত গাইডলাইন দেখেননি।

তবে তিনি বলেন, 'শরিয়াহ বোর্ডে ব্যাংকারদের প্রয়োজন আছে।'

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বলেন, 'সংশোধিত নীতিমালার খসড়া কপি পেয়েছি এবং কিছু বিষয়ে আমার মতামত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংকার ও ইসলামি আইনে জানা ব্যক্তিদের নিয়ে সুপারভাইজরি কমিটি গঠন করা উচিত বলে আমি মনে করি।'

জাফর আলম যুক্তি দেন, 'বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের ইসলামি আইনশাস্ত্র নিয়ে কোনো জ্ঞান নেই। আবার ইসলামি আইনশাস্ত্রে জ্ঞানী ব্যক্তিদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ব্যবহারিক জ্ঞান নেই।'

এদিকে সংশোধিত নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংক ও শরিয়াহ-সম্মত শাখা ও উইন্ডোগুলো জরিমানাসহ সুদের আয়, আয় হিসাবে স্থানান্তর করা যাবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এই সুদ কোন অংশে অন্তর্ভুক্ত থাকবে তা নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আরও জানান, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সব সেবা অবশ্যই শরিয়াহ মেনে চলতে হবে এবং প্রতি দুই মাস পর তাদের ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ইসলামি ব্যাংকগুলো যেন নিয়ম মেনে চলে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, 'ইসলামি ব্যাংকগুলোতে ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ না থাকা নিয়মের লঙ্ঘন। আর যদি কোনো ইসলামি ব্যাংক শরিয়াহ মেনে না চলে, তাহলে তা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।'

মো. মাইন উদ্দিন পরামর্শ দেন, নির্দেশনা অনুযায়ী শরিয়াহ বোর্ড বা কমিটি গঠন করা না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তা সমাধান করতে হবে

বর্তমানে দেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক আছে দশটি। এগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।

এছাড়া ১১টি ব্যাংকের ২৩টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও ১৪টি ব্যাংকের ৫৮৮টি ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো আছে। আমানত সংগ্রহের দিক দিয়ে ব্যাংকিং খাতে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অংশ ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং বিনিয়োগের দিক দিয়ে ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

1h ago