ব্যাংকে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ১০০ মিলিয়ন ডলার
মূলত গত বছরের তুলনায় চলতি বছর রেমিট্যান্স কম আসায় ও রপ্তানি আশানুরূপ না হওয়ায় দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় গত মাসে ডলারের পরিমাণ এর আগের মাসের তুলনায় কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার ব্যালেন্স গত আগস্টে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে। গত জুলাইয়ে তা ছিল পাঁচ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোয় ডলারের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন কমেছে।
তবে আগস্টে ডলারের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।
২০২১-২২ অর্থবছরের পর ব্যাংকগুলোয় ডলার মজুতের সর্বনিম্ন রেকর্ড হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। তখন ডলারের মজুত ছিল সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মাসে প্রবাসীরা এক দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এটি গত বছরের তুলনায় ২১ দশমিক পাঁচ শতাংশ কম। ২০২০ সালের এপ্রিলের পর রেমিট্যান্স দ্রুত কমছে।
এদিকে, রপ্তানিকারকরা চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। এটি গত বছরের তুলনায় তিন দশমিক আট শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলোয় ডলার মজুত ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলারের মজুত দেশের রিজার্ভের অংশ নয়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। কেননা, দেশে আসা ডলারের তুলনায় এর চাহিদা বেশি ছিল।
২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি বিলও বেড়ে গেছে। ফলে, ২০২২ সালের মে থেকে রিজার্ভ কমছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলোয় ডলারের মজুত কমে যাওয়ার প্রধান কারণ রেমিট্যান্স কমেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আরেকটি কারণ হলো, লেটার অব ক্রেডিটের (এলসি) যেসব পেমেন্ট স্থগিত ছিল, সেগুলো এখন পরিশোধ করা হচ্ছে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলারের মজুত কমে যাওয়া নতুন কিছু নয়। কারণ এর বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংক ডলার সংকটে পড়েছে।'
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছর থেকে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।
গত ৩১ আগস্ট এই দুই সংগঠন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনে তা ১১০ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। চলতি মাসের প্রথম কর্মদিবস থেকে তা কার্যকর হয়।
এরপর নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, আজ সোমবার থেকে তারা ১১০ টাকায় ডলার কিনে তা ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির কথা জানান।
বেসরকারি ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, 'খোলা বাজারে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো বাফেদা-এবিবি নির্ধারিত দামে ডলার পাচ্ছে না।'
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিনিময় হার নির্ধারণ হওয়ায় দেশের ব্যাংকগুলো ডলার সংকটে পড়েছে।'
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ডলারের দুই প্রধান উৎস হলেও এখন এই দুই খাতের অবস্থা ভালো নয় বলে মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ।
Comments