দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিপদ বাড়তে পারে: মুডি’স

দেশের কিছু ব্যাংকের স্বাস্থ্য সামনের দিনগুলোতে আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে মুডি'স ইনভেস্টর্স সার্ভিস। যেসব ব্যাংকের কাছে ট্রেজারি বিল-বন্ড কম আছে তাদের এই সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা আছে। কারণ এসব সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বা তহবিল সংগ্রহ করে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো তহবিল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে বিপদে পড়তে পারে।

বিপদে পড়লে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হবে। এতে ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা কমতে পারে। এবং আমানত কমে যেতে পারে। এতে ব্যাংকের তারল্য আরও চাপের মুখে পড়বে এবং তারা একটি দুষ্টচক্রে পড়ে যাবে।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চাপে থাকা ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে আগের তুলনায় কম পরিমাণে ঋণ দিতে বাধ্য হবে।

মুডি'স এর সতর্কবাণী এমন এক সময় এলো, যখন বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। আমদানি বেড়ে যাওয়া ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়ায় মার্কিন ডলারের সরবরাহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাপের মুখে পড়েছে। এছাড়াও, উচ্চ মাত্রার মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণও কমছে।

২০২১ এর জুন থেকেই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের চাপ দেখা দিতে শুরু করে। সে সময় বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে মার্কিন ডলারের সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো বেশি করে ডলার কিনতে বাধ্য হয়। এর ফলাফল হিসেবে আমদানিকারকদের মাঝে লেটার অব ক্রেডিটের (এলসি) চাহিদা বেড়ে যায়।

সাধারণত ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ট্রেজারি বিল-বন্ড কিনে থাকে।

যেসব ব্যাংকের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ সরকারি সিকিউরিটি আছে এবং একইসঙ্গে, যাদের স্থিতিশীল তহবিলের উৎস রয়েছে, তারাই চলমান তারল্য সংকট দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে।

তারল্য সংকট সমাধানে ব্যাংকগুলো অন্যান্য ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুবিধার মাধ্যমে ঋণ নিতে পারে। তবে এর ফলে ব্যাংকগুলোর খরচ অনেক বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে, ব্যাংকের মুনাফার ওপর চাপ পড়তে পারে।

প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতাগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

ব্যাংকিং খাতের জন্য এখন মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে প্রত্যাশার চেয়ে ধীর গতির রেমিট্যান্স প্রবাহ, যেটি বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ডলারের সবচেয়ে সুলভ উৎস হিসেবে বিবেচিত।

গত জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় পরের প্রান্তিকে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ১৫ শতাংশ কমে গেছে। এর পেছনে হুন্ডি একটি বড় কারণ।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াতে পারিবারিক সঞ্চয়ের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর আমানতে ভাটা পড়েছে।

সেপ্টেম্বরে আমানতের পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। ১ বছর আগে এই হার ১১ শতাংশ ছিল।

রেটিং সংস্থাটি আরও জানায়, ২০২৩ জুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি আমানতের প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ দিতে থাকবে, যার ফলে এ বছর তারল্য সংকট পুরোপুরি দূর হবে না। এছাড়াও, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানিকারকদের আয়ও কমে যেতে পারে।

সংস্থাটির পূর্বাভাষ মতে, এ বছর বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশ থাকতে পারে, যেটি মহামারি-পূর্ব সময়ে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ ছিল।

সংস্থাটি জানায়, তারল্য পরিস্থিতিতে ইসলামিক ব্যংকগুলো বেশি বিপদে থাকবে, কারণ এসব ব্যাংক অপেক্ষাকৃত কম তারল্য থাকায় এদের মুনাফা করার সক্ষমতাও কম।

উল্লেখ্য, কিছু শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক সম্প্রতি আর্থিক কেলেঙ্কারির মধ্য দিয়ে গেছে, যার ফলে আমানতকারীদের আত্মবিশ্বাসও কমতির দিকে। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তারল্য সহযোগিতা প্রসারিত করতে বাধ্য হয়েছে, যাতে ব্যাংকগুলো চলমান সংকটের মোকাবিলা করতে পারে।

(সংক্ষেপিত)

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

16h ago