গুজরাটে ২ জনের মৃত্যু, রাজস্থানের দিকে 'বিপর্যয়'

গুজরাটের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় অন্তত ৫২৪টি গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে। ছবি: রয়টার্স
গুজরাটের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় অন্তত ৫২৪টি গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে। ছবি: রয়টার্স

আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'বিপর্যয়' ভারত ও পাকিস্তানের উপকূলে আঘাত হানার পর তা এগিয়ে যাচ্ছে ভারতের রাজস্থান প্রদেশের দিকে।

আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে রাজস্থানের দিকে গিয়ে ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের গুজরাটে ঝড়ের আঘাতে অন্তত ২ জন মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন ২২ জন। কয়েক শ গাছ উপড়ে গেছে, ক্ষতি হয়েছে বেশকিছু বাড়ি ও গাড়ির।তবে পাকিস্তানে ঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) সর্বশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় 'বিপর্যয়' সৌরাষ্ট্র ও কুচ অঞ্চলের দিকে এগোবে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে এটি দুর্বল হতে শুরু করবে।

গুজরাটের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় অন্তত ৫২৪টি গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে। এর ফলে অন্তত ৯৪০টি গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয় এবং ২২ জন আহত হন।

ভবনগর জেলার একজন খামারি ও তার সন্তান ঘূর্ণিঝড়ে আটকে পড়া ছাগল রক্ষা করতে যেয়ে মারা গেছেন।

প্রায় ১০ দিন আরব সাগরের ওপর দিয়ে এগিয়ে এসে ঘূর্ণিঝড় 'বিপর্যয়' গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় গুজরাটের জাখু বন্দরের কাছাকাছি আঘাত হানে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার থেকে ১৪০ কিলোমিটারের মধ্যে।

আজ স্থানীয় সময় ভোররাত আড়াইটা থেকে ঝড়টি দুর্বল হতে শুরু করেছে। বাতাসের গতিবেগ কমে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ড. এম মহাপাত্র জানান, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে আজ ও আগামীকাল রাজস্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

গুজরাটের রাজ্য সরকার জানিয়েছে, সেখানে ৯৪ হাজার মানুষকে নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 'বিপর্যয়'র প্রভাবে গুজরাটে ট্রেনসেবা বিঘ্নিত হয়েছে। প্রায় ৯৯টি পূর্বনির্ধারিত রেল যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।

গুজরাটে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
গুজরাটে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ১৮টি দল, রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীর (এসডিআরএফ) ১২টি দল, রাজ্যের সড়ক ও ভবন বিভাগের ১১৫টি দল ও বিদ্যুৎ বিভাগের ৩৯৭টি দল উপকূলীয় জেলাগুলোয় কাজ করছে।

রাজ্যে সব ধরনের মাছ ধরা ও বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সব জাহাজ নোঙ্গর করা আছে এবং গতকাল থেকে ওই রাজ্যে ২ ঐতিহাসিক উপাসনালয় দ্বারকাদিশ মন্দির ও সোমনাথ মন্দির বন্ধ রাখা হয়েছে।

আজ গুজরাটের জামনগর বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজ চলাচলের প্রয়োজন দেখা দিলে সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুদ রাখা হয়েছে বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতিতে ৮২ হাজার পাকিস্তানি নাগরিকসহ মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষকে নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল ভারতে 'বিপর্যয়' আঘাত হানলেও এখন পর্যন্ত করাচিসহ পাকিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চলে এর তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বন্দরনগরী করাচি ও উপকূলীয় এলাকা মাকলি, থাট্টা, বাদিনসহ ও অন্যান্য অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহের প্রচণ্ড গরম থেকে সেসব এলাকার মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সিন্ধু প্রদেশের আবহাওয়া ভালো থাকবে।

 

Comments