বেসরকারিকরণ: করাচি বন্দরের পর আলোচনায় পিআইএ

পিআইএ
লাহোরের আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পিআইএর উড়োজাহাজ। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

পাকিস্তানের করাচি বন্দর লিজ বা বিক্রির প্রসঙ্গটির মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে দেশটির জাতীয় উড়োজাহাজ সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) বেসরকারিকরণের প্রসঙ্গ।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই দরিদ্র দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকার পিআইএ'কে বেসরকারি খাতে ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর তা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে।

আজ শনিবার জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে যে পাকিস্তান সরকারের এই বেসরকারিকরণ প্রচেষ্টা বাধার মুখে পড়ছে।

এতে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুর দিকে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার অধীনে একটি সংস্থা আগামী চার মাসের মধ্যে পিআইএ'র বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা করতে আর্থিক উপদেষ্টা নিয়োগে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে।

চলতি বছরেই সংস্থাটির লোকসান ১৫৩ বিলিয়ন রুপি বা ৫৫০ মিলিয়ন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পিআইএ লোকসান করেছে ৭ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পাকিস্তানকে বাকি তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে শর্ত দিয়েছে। শর্তে পিআইএর মতো লোকসানে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে পুনর্গঠিত করার কথা বলা হয়েছে।

সম্প্রতি, পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বেসরকারিকরণমন্ত্রী ফাওয়াদ হাসান ফাওয়াদ স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, 'সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে পিআইএর দেনা একটি হোল্ডিং প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকবে। শুধু মূল সম্পদ ও বর্তমান দেনা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, বিক্রি হতে যাওয়া সম্পদের তালিকায় আছে পিআইএর উড়োজাহাজ, রুট পারমিট, ল্যান্ডিং রাইটস, কোর ইঞ্জিনিয়ারিং ও এয়ার সার্ভিস চুক্তি।

পাকিস্তানের এক কোটি ৭০ লাখ উড়োজাহাজ যাত্রীর ২৮ শতাংশ বহন করা পিআইএ দেশটির সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন্স। তবে গত শতকের আশির দশকে ভালো ব্যবসা করা করা এই সংস্থাটির সুদিন আর নেই।

দেশটির বেসামরিক উড়োজাহাজ চলাচল কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক যাত্রীদের প্রায় ২২ শতাংশ পিআইএ ব্যবহার করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পিআইএর কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে গড়ে উঠা এমিরেটস এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এয়ারলাইন্স।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকে মনে করেন, সরকারের উচিত সব সংকট উত্তরণের চেষ্টা করা। পিআইএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, 'পিআইএ পাকিস্তানের কৌশলগত সম্পদ। একে পুরোপুরি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না।'

তার পরামর্শ, পিআইএর অবকাঠামোগত সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগাতে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, 'সারা পৃথিবীতে পিআইএর যে পরিমাণ সম্পদ আছে, যেমন ভবন ও হোটেল যেগুলো ভাড়া দিয়ে সংস্থাটির লোকসান কাটানো যেতে পারে।'

অনেক বিশেষজ্ঞ পিআইএর বাজারদর নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, সংস্থাটির বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া সহজ হবে না। কেননা, অতীতেও বেশ কয়েকবার এমন উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো ব্যর্থ হয়।

এয়ারলাইন্স অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ও পাকিস্তান বেসামরিক উড়োজাহাজ চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক আফসার মালিক সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, 'কেউই পিআইএ'কে কিনবে না। এর লোকসান আছে ৭০০ বিলিয়ন রুপি। নিরাপত্তা ইস্যুতেও এর বদনাম আছে।'

২০২০ সালে করাচিতে পিআইএর উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানি হয়েছিল।

তার মতে, পিআইএ'কে পুরোপুরি বেসরকারিকরণ করা সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, এখন এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সংস্থাটিকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করা।

পিআইএর মতো সংস্থাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া অধিকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

গত মঙ্গলবার ট্রেড ইউনিয়নিস্ট মুখতার জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে বলেন, পিআইএর কর্মীরা বেসরকারিকরণের বিরোধিতা চালিয়ে যাবে।

বামপন্থি সংগঠন পিপলস ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মী আলিয়া বুখশাল বলেন, তার দলের পক্ষ থেকে পিআইএ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তারা সবাইকে নিয়ে পিআইএর বেসরকারিকরণ ঠেকাতে কাজ করছেন। তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, 'আমরা অলস বসে থাকব না। বেসরকারিকরণের তীব্র বিরোধিতা করবো।'

ইসলামাবাদ-ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ শহিদ মাহমুদ বলেন, পিআইএ অথবা পাকিস্তান স্টিল মিলের মতো রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো সরকার ব্যবহার করে। আমলা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এসবের সুবিধা নেন।

তার মতে, যেহেতু এসব সংস্থা ক্রমাগত লোকসান করছে সেহেতু এগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

একই দিনে জেদ্দা-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যারাব নিউজ জানায়, পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বেসরকারিকরণমন্ত্রী ফাওয়াদ হাসান ফাওয়াদ বলেছেন, দেশটির জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স ক্রমাগত লোকসান করায় একে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, পাকিস্তানের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিআইএর জন্য অর্থ ঋণ দিতে রাজি নয়।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

3h ago