জুলাই-ডিসেম্বরে বার্ষিক উন্নয়ন খরচ কমেছে ১৯ শতাংশ
মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনুমোদিত প্রকল্পগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করতে দেরি হওয়ায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ কমেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্নয়ন খরচ হয়েছে ৫০ হাজার দুই কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে অন্তর্বর্তী সরকার মোট বাজেটের প্রায় ১৮ শতাংশ খরচ করেছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন বাস্তবায়নের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। এটি মোট বরাদ্দের ২২ শতাংশের বেশি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ভাষ্য, 'এ বছর এডিপি বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়েছে। কারণ, প্রথম কয়েক মাসে সরকারকে অনেক প্রকল্প যাচাই-বাছাই ও সংশোধন করতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ ছিল।'
গত সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'এখন আমরা প্রকল্প যাচাই-বাছাই দ্রুত করছি।'
পরিকল্পনা উপদেষ্টার আশা—আগামীতে এডিপি বাস্তবায়ন দ্রুত হবে। কারণ, বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কয়েকটি নতুন প্রকল্প যাচাইয়ের বেশি সময় লাগবে না।
সংসদ সদস্য না থাকায় ও স্থানীয় সরকারের ভঙ্গুর অবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রশাসকরা স্থানীয় সরকার পরিচালনা করছেন। নতুন প্রকল্পে তাদের আগ্রহ কম।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের বলেছি। পরিকল্পনা কমিশনও নতুন প্রকল্প অনুমোদনের সময় জনগণের চাহিদা বিশ্লেষণ করছে।'
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধীরগতির বড় কারণ। এটি জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, '২০২৪ সালের আগস্টে পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ায় এডিপি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এ ছাড়াও, প্রশাসন এখনো সম্পূর্ণ স্থিতিশীল হতে পারেনি। ফলে বাকি ছয় মাস এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি থাকতে পারে।'
প্রথম ছয় মাসে এডিপিতে সরকারি অর্থায়নের খরচ ছিল ১৬ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ২০ শতাংশ।
একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে বিদেশি তহবিলের ব্যবহার হয় প্রায় ২০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে তা ছিল ২৬ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ছয় মাসে তহবিলের সবচেয়ে কম ব্যবহার করেছে। মাত্র চার দশমিক নয় শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভাগ বরাদ্দ পাওয়া তহবিলের ৩১ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২৯ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৫ শতাংশ ও কৃষি মন্ত্রণালয় ২১ শতাংশ খরচ করেছে।
Comments