দুয়ার সার্ভিসের ৫ কোটি টাকা তহবিল সংগ্রহ স্থগিত করল বিএসইসি

বিএসইসি
ছবি: সংগৃহীত

গ্রাহক চুক্তি ও মুনাফা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের পাঁচ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে তোলার জন্য কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) সাবস্ক্রিপশন স্থগিত করেছে।

এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

গতকাল মঙ্গলবার বিএসইসি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার সাবস্ক্রিপশন আগামী ১৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলার কথা ছিল।

বাজার বিশ্লেষকরা দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ প্রতিষ্ঠানটির আয় মূলত দুই গ্রাহকের কাছ থেকে আসে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি দুইজনের একজন ব্যবসা তুলে নেন তাহলে প্রতিষ্ঠানটি ঝুঁকিতে পড়বে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রসপেক্টাসে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুয়ারের মোট রাজস্বের ৮১ শতাংশ অর্থাৎ ৫৮ কোটি টাকা এসেছে অগ্রণী ব্যাংককে সেবা দেওয়া থেকে ও ১৭ শতাংশ বা ১২ কোটি টাকা এসেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে।

আইডিআরএ-তে দুয়ারের পরিষেবাগুলো ইতোমধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কারণ বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের তথ্য দিতে অনিচ্ছুক।

এ ছাড়াও, নিলাম প্রক্রিয়া ও প্রকল্প পরিচালনাকারীকে দেওয়া সেবার বেশি দাম নিয়েও সমালোচনা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাছাড়া, অগ্রণী ব্যাংকে দুয়ারের সেবার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।

এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংক বাইরের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করে নেওয়ার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে অগ্রণী ব্যাংকের প্রকল্পটি তৃতীয় পক্ষের কাছে আউটসোর্সিংয়ের বিষয়টি চিহ্নিত করেছিল।

বিগত সরকারের আমলে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অগ্রণী ব্যাংকের প্রকল্প দুটোই পেয়েছিল দুয়ার। বর্তমান সরকার চুক্তি নবায়ন না করলে প্রতিষ্ঠানটি ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক পরিচালক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।'

২০২২-২৩ অর্থবছরে দুয়ার ৩৬ কোটি টাকা রিটেইনড আর্নিংস দেখানোর পাশাপাশি ২২ কোটি টাকা মুনাফার কথা জানায়।

এতে বলা হয়েছে, তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসার পরিধি বাড়ানো।

গত বছরের ৯ জুন ১০ টাকা দামের ৫০ লাখ শেয়ার বাজারে ছাড়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পায়। যদিও ডিএসই এই প্রতিষ্ঠানটিকে তহবিল সংগ্রহের অনুমতি না দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।

২০২৩ সালের ৮ আগস্ট ডিএসই কিউআইওর বিরোধিতা করে পর্যবেক্ষণ জমা দেয়। ডিএসই এমন সিদ্ধান্তের জন্য দুটি মূল পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে।

প্রথমত, প্রতিষ্ঠানটি কিউআইওতে এগিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে ১০ লাখ টাকা থেকে ৪৪ হাজার ৪০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে শেয়ার মূলধন ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করে।

দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করে সেলোস্কোপ লিমিটেডকে আট কোটি ৬৮ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে একইপক্ষীয় লেনদেন করে।

২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ বেড়ে হয় ১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

এ ছাড়াও, দুয়ার সার্ভিসেস ঋণের জন্য যথাযথ ডকুমেন্টেশন বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়।

ডিএসই বলছে—সুদ, কিস্তি, টাকা পরিশোধের সময় ও পদ্ধতির মতো বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠানটি বিবেচনা করেনি। এর ভাষ্য, 'সংশ্লিষ্ট পক্ষের লেনদেনের জন্য আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে এই লেনদেনগুলো আর্মস লেন্থ ভিত্তিতে পরিচালিত হয়নি বলে দেখা যাচ্ছে।'

ডিএসই আরও জানায়, ২০১৯ সালের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে সেলোস্কোপ লিমিটেড নেতিবাচক রিটেইনড আর্নিংস নিয়ে লোকসানে চলা প্রতিষ্ঠান।

ডিএসই আরও বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক বিবরণীর নিরীক্ষা না করায় এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দুয়ার সার্ভিসেস তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে প্রচুর টাকা পাঠিয়েছে। এটি এসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে না থাকায় যাচাই করা যায়নি।

দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের হেড অব অপারেশনস বনি তাসনিম ইবনে রাজ্জাক দুটি বড় গ্রাহকের ওপর তাদের নির্ভরতার কথা স্বীকার করে ডেইলি স্টারকে জানান, ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে শুরু করে।

এসএমএস অ্যাগ্রিগেশন লাইসেন্সধারী এই প্রতিষ্ঠানটি আয় বাড়ানোর পরিকল্পনাও করেছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রায় ১০ লাখ অ্যাকাউন্ট যোগ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা যদি প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার পাশাপাশি গুণগত মান নিশ্চিত করি তবে অগ্রণী ব্যাংক আমাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।'

সফটওয়্যার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির জন্য অগ্রিম টাকা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এসবের জন্য অগ্রিম টাকা দেওয়ার বিষয়টি লিখিত আছে। সেলোস্কোপ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে, ডেলিভারির পর এগুলো প্রতিষ্ঠানের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।'

উল্লেখযোগ্য মুনাফা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানো ও পরিষেবা সরবরাহকারী হিসেবে শক্তিশালী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে চায়।

'তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। আরও প্রকল্প সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Teacher candidates: Water cannons, batons used to disperse protesters

Despite police action, many protesters gathered near the High Court around 4:35pm

17m ago