আয় বৈষম্যের চেয়েও ভয়াবহ সম্পদের বৈষম্য
বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ আয়-বৈষম্যের দেশগুলোর অন্যতম। তবে এর চেয়েও খারাপ হচ্ছে সম্পদ-বৈষম্য। অর্থাৎ, দেশে কম মানুষের হাতে বেশি মানুষের তুলনায় প্রচুর সম্পদ।
গতকাল সোমবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে আয়-বৈষম্য শূন্য দশমিক ৪৮ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে শূন্য দশমিক ৫০ হয়েছে।
একই সময়ে সম্পদের বৈষম্য শূন্য দশমিক ৮২ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৮৪ হয়।
হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের (এইচআইইএস) তথ্য ব্যবহার করে পরিসংখ্যানটি তৈরি করা হয়েছে।
গত রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া অর্থনীতিবিদদের শ্বেতপত্রে বলা হয়, 'বাংলাদেশের বর্তমান আয়বৈষম্য অনেক বেশি উদ্বেগজনক।'
এইচআইইএস ২০২২ এর তথ্য বলছে, দেশে সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের সম্পদের পরিমাণ মাত্র সাত লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
বৈশ্বিক আর্থিক তথ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বের যেকোনো দেশকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশে অতি ধনী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
প্রবৃদ্ধির হার ওই বছর ১৭ দশমিক তিন শতাংশ হয়েছিল।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও শ্বেতপত্র প্যানেলের সদস্য জাহিদ হোসেন বলেন, 'সম্পদ গিনি কোইফিশিয়েন্ট দেশে সম্পদের অত্যন্ত অসম বণ্টন তুলে ধরেছে।'
তার ভাষ্য, 'এই বৈষম্য আন্তঃপ্রজন্মের উত্তরাধিকারের মাধ্যমে স্থায়ী হয়। উচ্চ-আয়ের মানুষের মধ্যে সম্পদ জমা হয়। পরে তাদের সন্তানদের হাতে আসে।'
দীর্ঘদিন ধরে চলা আয়বৈষম্যও সম্পদ-বৈষম্যের একটি কারণ। আবার সম্পদ-বৈষম্যের কারণে আয়বৈষম্য আরও প্রকট হয়। তিনি মনে করেন, 'সামাজিক গতিশীলতা কমে যাওয়ায় অল্প আয়ের মানুষ ধনী হতে পারছে না।'
তিনি দেশে উত্তরাধিকার কর নেই বলে জানান। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের কর সেসব দেশে সম্পদ-বৈষম্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশে সম্পদের ওপর সারচার্জ আরোপ করা হলেও এর কার্যকারিতা সীমিত। চার কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের সারচার্জ শূন্য শতাংশ থেকে শুরু করে বেশি সম্পদের ক্ষেত্রে তা ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক সম্পদের ওপর বর্তমান সারচার্জের সমালোচনা করে প্রশ্ন রাখেন, 'এটা কী ধরনের ব্যবস্থা?'
তার মতে, কার্যকর নীতি না থাকায় ব্যাপক হারে করফাঁকি ও দুর্নীতি ধনীদের সম্পদ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, 'যেমন, জমি বা ফ্ল্যাটের প্রকৃত দাম ও তাদের নিবন্ধিত দাম প্রায়ই দুই রকমের হয়। তা ছাড়া করনীতি অসাবধানতাবশত বিত্তবানদের মধ্যে সম্পদ সঞ্চয়কে উৎসাহিত করে।'
ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ডেটাবেজের তথ্য বলছে, 'বাংলাদেশের নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষ দেশের মোট সম্পদের মাত্র পাঁচ শতাংশের মালিক।'
জাহিদ হোসেন বলেন, 'এই বৈষম্য কমাতে আয়করকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত ও তা কার্যকর করা দরকার। পাশাপাশি অবৈধ উপার্জন বন্ধ করতে হবে।'
Comments