৫ শতাংশ ধনীর হাতেই ৩০ শতাংশ আয়

দেশের মোট আয়ের ৪০ শতাংশই যায় শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর পকেটে। সাম্প্রতিক এক সরকারি সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এই হার ২০১৬ সালের তুলনায় প্রায় তিন শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) 'হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে ২০২২' অনুসারে, বাংলাদেশে হওয়া আয়ের ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশই যায় শীর্ষ পাঁচ শতাংশ পরিবারের কাছে। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।

আর মোট আয়ের ৪০ দশমিক ৯২ শতাংশই শীর্ষ ১০ শতাংশ পরিবারের। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৩৮ দশমিক ০৯ শতাংশ।

এ ছাড়া, ২০২২ সালে দরিদ্রতম পাঁচ শতাংশ পরিবারের আয় ছিল দেশের মোট আয়ের দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই হার ২০১৬ সালে ছিল দশমিক ২৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তালিকার নিচের দিকে স্থান পাওয়া ৫০ শতাংশ পরিবারের মালিকানায় থাকে দেশের মোট আয়ের ১৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ২০ দশমিক ২৩ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুসারে, সমতার অর্থনৈতিক পরিমাপ জিনি সহগ ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৯৯ এ, যা ২০১৬ সালে ছিল দশমিক ৪৮২। এর অর্থ, ২০১৬ ও ২০২২ সালের সমীক্ষার মধ্যবর্তী সময়ে দেশে আয় বৈষম্য বেড়েছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, কর ফাঁকি ও অর্থপাচার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সমাজে আয় বৈষম্য বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গতকাল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে এবং সেখানে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর অর্থ, এটাই বাস্তবতা।'

তার ভাষ্য, অল্প সময়ের মধ্যে অনেক প্রার্থীর সম্পদ বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাই সমাজে আয় বৈষম্য তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত এবং একইসঙ্গে এটি বিস্ময়করও বটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, 'এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমাজের একটি বড় অংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।'

বিবিএসের সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যেও আয় বৈষম্য বৃদ্ধির পেছনে একটি কারণ হতে পারে কর্মসংস্থানের অভাব।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, 'এ ধরনের বৈষম্য কমাতে সংস্কার উদ্যোগ ও সঠিক অর্থনৈতিক নীতি প্রয়োজন।'

২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্র্য কমেছে। তবে এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য কমার হার ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মতো ততটা বেশি ছিল না।

২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি বছর দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল দশমিক ৯৩ শতাংশ পয়েন্ট।

২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রতি বছর দারিদ্র্য কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট।

সর্বশেষ বিবিএস প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটটি বিভাগের মধ্যে দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ বরিশালে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের প্রায় সমানই রয়েছে।

২০১৬ সালের জরিপে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি পাওয়া গিয়েছিল রংপুর বিভাগে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ, এরপর ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ।

তবে, সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে, এই দুটি বিভাগে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে রংপুরে ২৪ দশমিক ৮ এবং ময়মনসিংহে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে।

২০২২ সালে চট্টগ্রামে দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

খুলনায় দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশে, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে ঢাকা ও সিলেট বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে—এমনটিই দেখা গেছে সর্বশেষ জরিপের তথ্যে।

ঢাকায় দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৬ শতাংশ। সিলেটে সর্বশেষ দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, 'দেশে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক দরিদ্র মানুষ রাজধানীতে চলে এসেছেন—এটা ঢাকায় দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির পেছনে একটি কারণ হতে পারে।'

'এ ছাড়া, করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক ধাক্কা ঢাকায় বেশি লাগলেও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি প্রধানত গ্রামীণ এলাকায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে', যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

3h ago