কর মওকুফের পরিমাণ কমানো হলে আয় বাড়বে ৩০ হাজার কোটি টাকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন। ছবি: সংগৃহীত

কয়েকটি খাতে কর মওকুফের পরিমাণ কমানো হলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের আয় ৩০ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে মনে করছেন এক স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের মতে, 'কর মওকুফের পরিমাণ কমিয়ে না দিলে কর-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে বাড়ানো যাবে না।'

বুধবার ঢাকায় পিআরআই কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, 'বর্তমানে এটিই রাজস্ব আয় বাড়ানোর দ্রুততম উপায়।'

তবে কর ছাড়ের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু তিনি বলেননি।

দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও কর-জিডিপি অনুপাত আট দশমিক চার শতাংশে রয়ে গেছে। এই হার বিশ্বে সর্বনিম্ন।

পুরো রাজস্বনীতি বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, 'ব্রিটিশ আমলের ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি দিয়ে এটা হবে না। এ জন্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন।'

'সরকার এখন নতুন মেয়াদে আছে। এখন রাজস্ব সংস্কারের উপযুক্ত সময়। তবে আমরা এখনো কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।'

শিগগিরই আসন্ন অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে এবং তাতে সংস্কারের প্রতিফলন থাকতে হবে বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে আগামী বাজেট নিয়ে পরামর্শ দিয়েছে।

পরামর্শের একটি ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যক্তিগত আয়কর ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করা।

আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, 'এটা যৌক্তিক হবে।'

পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক বলেন, 'নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। এখনই বড় ধরনের সংস্কারের উপযুক্ত সময়।'

বিত্তবানদের ওপর কর বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পিআরআই 'কানেক্টিং ফিসক্যাল পলিসি চেঞ্জেস টু ইকোনমিক আউটকামস: এভিডেন্স ফ্রম এ কোয়ান্টিটেটিভ এক্সারসাইজ' শীর্ষক গবেষণা উপস্থাপন করে।

এতে বলা হয়, করের পরিধি বাড়াতে ও ব্যক্তিগত আয়ের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্সের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় দুই শতাংশ পয়েন্ট বাড়লে অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা আসবে।

এতে আরও বলা হয়, এর ফলে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত দাঁড়াবে ১০ দশমিক চার শতাংশ।

সরকার এই বাড়তি আয় অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক দুই শতাংশ বাড়বে।

এই অর্থ আদায় করা গেলে তা জিডিপির শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে আইএমএফের শর্ত পূরণে সহায়ক হবে।

এই প্রাক্কলন এমন এক সময়ে এলো যখন দেশের স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর দেওয়ার মতো আয়ের মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সরকারকে পর্যাপ্ত রাজস্ব পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্ত পূরণ করতে হবে বলেই সরকারের কর আদায় বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করপোরেট আয়কর বাড়ানো হলে প্রবৃদ্ধির ওপর কম প্রভাব পড়বে এবং নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে।

পিআরআই পরিচালক বজলুল হক খোন্দকার বলেন, 'মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ভ্যাট বাড়ানো হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবারের আয় ও ক্রয়ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'

'ভ্যাট সংস্কার এখনো প্রয়োজন। তবে কর বাড়াতে ব্যক্তিগত আয়ের দিকে আরও বেশি মনোনিবেশ করা উচিত' বলে মনে করেন তিনি।

তার মতে, ভ্যাটের ক্ষেত্রে শুধু কর বাড়ানোর পরিবর্তে ২০১২ সালের মূল ভ্যাট আইনে বলা কৌশলগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংস্কার ও অদক্ষতা দূর করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার।

Comments

The Daily Star  | English
Chattogram port Imports

Reducing penalty on false declarations will encourage smuggling: experts

In the Finance Ordinance 2025–26, presented on Monday, the government proposed amending the Customs Act 2023 and revising the penalty structure for tax evasion related to intentional false declarations during import clearance, reducing the minimum fine from twice the evaded amount to an equivale

1h ago