সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম, আলু, পেঁয়াজ
সরকারি সংস্থাগুলো বাজারে অভিযান চালালেও এখনো খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম, আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না।
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম না কমার পাশাপাশি বাজারে সরবরাহ না বাড়ায় পণ্যগুলোর দাম কমছে না।
এ ছাড়াও, শুধু অভিযান চালিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। অর্থনীতিবিদদের মতে, যারা ভ্যালু চেইনে আছেন, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
পাইকারি পর্যায়ে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনো এর প্রভাব দেখা যায়নি।
খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়। এই ঘোষণার পর থেকেই সরকারি সংস্থাগুলো অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
গত মাসে একটি ডিম খুচরা ১৫ টাকায় বিক্রি হওয়ায় সরকার তা ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। গত মাসে ভারত পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর সরকার প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। প্রতি কেজি আলুর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫-৩৬ টাকা।
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকার খুচরা বিক্রেতা নুরুল আলম শিকদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন।
আরও জানান, তিনি ৪৩ টাকা কেজি দরে আলু, ৭২ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ ও ১৪৪ টাকায় এক ডজন ডিম কিনেছেন।
নুরুল আলম শিকদার বলেন, 'বেশি দামে কেনা হয়েছে বলে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না।'
ঢাকার অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরবরাহ না বাড়িয়ে অভিযান চালিয়ে দাম নির্ধারণ করলে খুচরা পর্যায়ে দাম কমবে না।'
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার ডিমের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ মোস্তাকিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার ভারত থেকে ডিম আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বাজারে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে।'
তিনি জানান, গতকাল বুধবার তিনি ১০০ ডিম ১ হাজার ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এক সপ্তাহ আগেও একই সংখ্যক ডিমের দাম ছিল এক হাজার ১৮০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
তিনি মনে করেন, সরকারের বর্তমান উদ্যোগগুলো স্বল্পমেয়াদে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে তা কার্যকর নয়।
রাজধানীর শ্যামবাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাজেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পেঁয়াজের মতো পচনশীল পণ্যের দাম নির্ধারণ করে কতটুকু সাফল্য অর্জন করা যাবে তা বলতে পারছি না।'
ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি?
চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮৮-৯০ টাকা ও প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকায়।
বন্দরনগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার হালিম ট্রেডার্সের মালিক আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা প্রতি কেজি আলু ৪২ টাকায় কিনেছি এবং পরিবহন খরচ বাবদ কেজিপ্রতি আরও ২-৩ টাকা লেগেছে। কিছু আলু নষ্টও হয়েছে। একইভাবে আমরা ১১ টাকা পিস দরে ডিম কিনে তা ১২-১৩ টাকায় বিক্রি করছি।'
বগুড়ার রাজাবাজারের খুচরা বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার নির্ধারিত দামে আলু কেনা যায়নি। তাই সরকার নির্ধারিত দামে তা বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।'
মুন্সিগঞ্জের কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক দুলাল বাবু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত দুই দিন ধরে আমাদের কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বিক্রি হয়নি।'
ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তাদের ভাষ্য
'ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় প্রতিদিন বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে' উল্লেখ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিন্তু এখনো দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।'
তিনি জানান, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে লেনদেনের রশিদ না থাকায় কে আসলে বেশি দাম রাখছেন তা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে নিয়মিত অভিযানের কারণে গত কয়েকদিনে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে।
'কয়েকদিন পর এর প্রভাব দেখা যাবে,' বলে ডেইলি স্টারের কাছে মন্তব্য করেছেন ডিএনসিআরপির ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলেই দাম কমবে এমন নিশ্চয়তা নেই। পাশাপাশি ভ্যালু চেইনে যারা আছেন তাদের জবাবদিহিতা ও বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যারা বাজার প্রভাবিত করেন তাদের অবশ্যই কার্যকরভাবে সতর্ক করতে হবে।'
Comments