৫ বাণিজ্য চুক্তি থেকে বাংলাদেশের লাভ সীমিত

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০২৩
স্টার ফাইল ফটো

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে, সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) ব্যতীত অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তির আওতাভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক নয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। কারণ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে ভারত থেকে কিছু সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ।

সাফটার আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়ে ২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে ট্রেড প্রেফারেন্সিয়াল সিস্টেমের (টিপিএস) আওতায় ৫৭ সদস্যের অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনে (ওআইসি) বাংলাদেশের রপ্তানি ৫ বছরে ২৪ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

আটটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নয়নশীল দেশের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা ডি-৮ এর ক্ষেত্রে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি ১১ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ডি-৮ পিটিএ'র আওতায় থাকা দেশগুলোতে রপ্তানি ধীর গতির অন্যতম কারণ হলো- তারা যেসব পণ্যে সুবিধা দিয়ে থাকে বাংলাদেশের সেসব পণ্য কম।

তিনি বলেন, ওআইসি টিপিএসের অধীনে রেয়াতি শুল্কের জন্য নির্ধারিত পণ্যের সংখ্যাও কম।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার আছে ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায়।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে আছে, তাই বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। বরং, অন্যান্য দেশকে আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি করতে ছাড় দিতে হবে। একইসঙ্গে আঞ্চলিক জোটগুলোকেও ছাড় দিতে হবে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ স্বাক্ষরিত আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির অবদান খুবই কম।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ মূলত স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে লাভবান হচ্ছে।'

ভারত ও জাপানের সঙ্গে একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সরকার আলোচনা করছে।

খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার পর সাফটা ও আপটা সদস্য দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা না পাওয়ায় যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শুরু করা বাংলাদেশের জন্য জরুরি।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে অগ্রগতি এখন পর্যন্ত মন্থর, যদিও আলোচনা শেষ করতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ এখনো আলোচনা শুরু করেনি। মনে হচ্ছে, আমরা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিইনি। বাণিজ্য চুক্তি করতে বাংলাদেশকেও অন্যদের জন্য বাজার উন্মুক্ত করতে হবে।'

'শুধু ট্যারিফ সুবিধা পেতে স্বল্পোন্নত দেশের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,' বলেন তিনি।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান স্বীকার করেন, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, সেসব দেশে রপ্তানি বাড়েনি।

'কিন্তু, রপ্তানি ধীর গতিতে বাড়তে পারত, যদি আমাদের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি না থাকত,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ওআইসির সব সদস্য দেশ টিপিএসের অনুমোদন দেয়নি এবং ডি-৮ এর আওতায় পণ্যের কভারেজ খুব কম।

'আমাদের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যাও কম। সুতরাং, আমরা বাণিজ্য চুক্তির সম্পূর্ণ সুবিধা নিতে পারিনি,' যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, পাটজাত পণ্যের জন্য তুরস্ক একটি বড় বাজার। তবে, বাংলাদেশে কাঁচা পাটের দাম বাড়ার পর তুরস্কের আমদানিকারকরা বিকল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ায় পাটজাত পণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ এইচ এম আহসানের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি বাড়ায় আপটা থেকে বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে, তা মোকাবিলার কৌশল প্রণয়ন করছে সরকার।

Comments

The Daily Star  | English

BNP discusses election with 12-party alliance, Jamiat Ulema-e Islam

BNP held two separate meetings today with the leaders of Jamiat Ulema-e Islam and the 12-party alliance to discuss the country’s current political situation and their future course of action to force the government to arrange the next election promptly, by implementing the necessary reforms

11m ago