বরিশাল অঞ্চলে ২৫ কোটি টাকার পেয়ারা বাণিজ্য
দেশে এখন পেয়ারার মৌসুম। আর এই সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে ওঠে বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির পেয়ারা হাটগুলো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, বরিশাল বিভাগে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হয়, যার দাম প্রায় ২৫ কোটি টাকা। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় সাড়ে ৯ টন।
এ সময় বরিশাল জেলার বানারীপাড়া, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ ও ঝালকাঠি সদর উপজেলার শত শত ছোট-বড় খালজুড়ে স্থানীয় জাতের সবুজ পেয়ারার হাট সবার নজর কাড়বে। সেই দৃশ্য দেখতে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে পর্যটকরাও সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।
এভাবে দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির পেয়ারা স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে আসছে।
বানারীপাড়া, নেছারাবাদ ও ঝালকাঠি সদর—এই ৩ উপজেলার ৫৫ গ্রামে ছড়িয়ে আছে পেয়ারার বাগান ও হাট-বাজার। এখানকার নদী-খালে চাষিরা নৌকায় সবুজ পেয়ারার পসরা সাজিয়ে বসেন। সেই দৃশ্য দেখতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থান থেকে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসছেন। পর্যটকদের কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠেছে পেয়ারা পার্ক ও রেস্টুরেন্ট।
পদ্মা সেতু চালুর পর এসব জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে। ফলে, অল্প সময়ের মধ্যে এসব অঞ্চলের পেয়ারা সারাদেশে পৌঁছে যাচ্ছে।
স্থানীয় পেয়ারা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ টন পেয়ারা ট্রাক ও ট্রলারে দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেয়ারার চাষ হয় পিরোজপুরের নেছারাবাদে। এই উপজেলায় ৮৩৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে অন্তত ৭ হাজার ৬৫৬ টন পেয়ারা উৎপাদন হয়। ঝালকাঠি সদরে ৫৯১ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৬ হাজার ৩৫৫ টন ও বরিশালের বানারীপাড়ায় ২১০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয় ২ হাজার ৯৪০ টন পেয়ারা।
সবমিলিয়ে এই ৩ উপজেলায় ১ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার ৯৫১ টন পেয়ারা উৎপাদিত হয়, যার দাম প্রায় ১৬ কোটি টাকার বেশি।
বরিশাল, ঝালকাঠি ও নেছারাবাদ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, এসব অঞ্চলে উৎপাদিত ৯০ ভাগের বেশি পেয়ারা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জসহ অন্যান্য স্থানে পাঠানো হয়।
ঝালকাঠির পেয়ারা ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কীর্তিপাশা ইউনিয়নের শতদশকাঠী থেকে প্রতিদিন অন্তত ২০০ মন পেয়ারা শরীয়তপুরে পাঠানো হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মন দরে পেয়ারা কিনে আমি শরীয়তপুরসহ অন্যান্য জায়গায় পাঠাচ্ছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন।'
ব্যবসায়ী তরুণ হাওলাদার জানান, তিনি ঢাকায় প্রতিদিন ৩০০ মন পেয়ারা পাঠান। এই পেয়ারা ঢাকার শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী ও আবদুল্লাপুরে যায়।
নেছারাবাদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ ডেইলি স্টারকে জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ঢাকায় পেয়ারা পাঠানোর পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া প্রতিদিন অন্তত ১০০ টন পেয়ারা ট্রাকে ও ট্রলারে করে দেশের অন্যান্য এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী আহম্মদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু ঝলকাঠিতেই ২ হাজার পেয়ারা চাষি আছেন।'
ঝালকাঠির ভিমরুলী গ্রামের পেয়ারা চাষি মিনতি সমদ্দার ডেইলি স্টারকে বলেন, '৬২ শতাংশ জমির পেয়ারা বাগান ২২ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত ৫০ মন পেয়ারা বিক্রি করেছি।'
ভিমরুলী গ্রামের পেয়ারা চাষি স্বপন মিস্ত্রী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে পেয়ারার দাম মাঝেমধ্যে কমে যেত। এমনকি প্রতি মন পেয়ারার দাম ১০০ বা ১৫০ টাকার নিচে নেমে যেত। তখন চাষিরা পেয়ারা খালে ভাসিয়ে দিত। অবশ্য এ বছর এখন পর্যন্ত ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।'
তবে পেয়ারা চাষি শেখর সিকদারের অভিযোগ, এখানকার সমবায় সমিতিগুলো ঋণ দিলেও ব্যাংক থেকে চাষিদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। কম সুদে ঋণ পাওয়া গেলে চাষিরা লাভবান হতেন বলে মনে করেন তিনি।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পেয়ারা দিয়ে কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান গড়ে তোলা গেলে এখানকার মানুষের উন্নয়ন হতো। আমি ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।'
Comments