যে কারণে উৎপাদনে যেতে পারছে না এপিআই পার্কের ওষুধ কারখানাগুলো
রাজধানীর পাশে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কারখানা স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও গ্যাস সংযোগের অভাবে উৎপাদন শুরু করতে পারছে না।
ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ২০২৩ প্রণয়নের ফলে এপিআই শিল্পের বিনিয়োগকারীদের এখন বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরুর আগে বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে।
এর আগে এপিআই উৎপাদনকারীদের শুধু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হতো।
এখন ইউনিট চালুর আগে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়ার পর পেটেন্ট আইনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশের ওষুধশিল্প।
অ্যাকমি ল্যাবরেটরিজ, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যে এই পার্কে কারখানা স্থাপন করেছে। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও গ্যাসের অভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষামূলক উত্পাদনে যেতে পারেনি।
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কারখানাটির উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। গ্যাস সংযোগের অভাব ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা—বিশেষ করে, ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ২০২৩ এর কারণে এখনো উৎপাদনে যেতে পারিনি।'
'আগে আমাদের শুধু ডিজিডিএ থেকে অনুমতি নিতে হতো। এখন বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থার অনুমতি প্রয়োজন। এগুলো নিতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগবে।'
তার মতে, ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরকে বেশকিছু কাগজপত্র দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে, কারখানার মালিকদের আরও বেশি সময় ও অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে ব্যাংকের টাকায় কারখানা করেছি। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি।'
দেশের ২৬৫টি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এপিআই ইন্ডাস্ট্রিজ চালু হতে দেরি হওয়ায় সামগ্রিক ওষুধখাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।'
তিনি জানান, সরকার এখনো গ্যাস দিতে না পারায় এখানকার কারখানাগুলো চালু করা যাচ্ছে না।
একমি ল্যাবরেটরিজের পরিচালক শেখ মাকসুদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এপিআই ও ফার্মাসিউটিক্যালস উভয় ক্ষেত্রেই কাঁচামাল হিসেবে মিথানলের মতো অ্যালকোহল পণ্যের প্রয়োজন। এটি আমদানির জন্য মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের বাড়তি অনুমতি দরকার।'
তার মতে, যেসব বিনিয়োগকারী কোটি কোটি টাকা খরচ করে এপিআই উৎপাদন কারখানা করেছেন তারা জটিল আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছেন।
গ্যাসের অভাবে এপিআই পার্কে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার চালু হয়নি বলেও জানান তিনি।
প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ শহীদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এপিআই পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন শেষ হয়েছে। কারখানা স্থাপনের জন্য ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্লট দেওয়া হয়েছে।'
ওই এলাকায় গ্যাস ছাড়া সব ধরনের ইউটিলিটি সংযোগ আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এপিআই পার্কে গ্যাস সরবরাহের জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে আবেদন করা হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।'
তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (কর্পোরেট বিভাগ) ও কোম্পানি সচিব লুৎফুল হায়দার মাসুম আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে আপাতত কিছুই করা যাচ্ছে না।'
তবে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার চুক্তি করায় আগামী দেড় বছরের মধ্যে তারা সংযোগ দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এপিআই পার্ক বাস্তবায়নের পরও দেশে এপিআই উৎপাদনের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।'
এপিআই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর পেটেন্ট আইন এড়াতে নিজস্ব এপিআই তৈরিতে আগ্রহী বলে তিনি জানান।
দেশের ওষুধশিল্প অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি। 'যেহেতু আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই, তাই আমাদের সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কাছ থেকে দ্রুত অনুমতি পাওয়া প্রয়োজন,' যোগ করেন তিনি।
মঞ্জুরুল আলম আরও বলেন, 'বিকন সমস্যাটি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল। সে কারণেই প্রতিষ্ঠানটি এপিআই পার্কে কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে এসে চ্যালেঞ্জ এড়াতে চাইলে আমাদের সরকারি সহায়তা খুবই প্রয়োজন।'
Comments