আষাঢ়-শ্রাবণেও বৃষ্টির খরা, আমন খেতে সেচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক

আমন চাষ
ভরা বর্ষায় বৃষ্টির অভাবে আমনের খেতে সেচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। ছবিটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে তোলা। ১ আগস্ট ২০২৩। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে আষাঢ়-শ্রাবণ ভরা বর্ষার মৌসুম। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি হয়েছে ১৬ শতাংশ কম। জুলাইয়ে হয়েছে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ কম। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফসল আমন চাষের জন্য সেচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

আমন মৌসুমে ধান চাষের জন্য কৃষকরা বৃষ্টির ওপর নির্ভর করেন। তাই, সেচের বাড়তি খরচ তাদের ফসল উত্পাদনের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পণ্ডিতপুরের কৃষক হযরত আলী রুবেলের কথা ধরা যাক।

৩৬ বছর বয়সী এই কৃষক প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে ২ বিঘা জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খরায় মাঠ পুড়ছে। উল্লেখ করার মতো বৃষ্টি হয়নি। সেচ পাম্প অপারেটর এখন ১ বিঘা জমিতে সেচের জন্য ৩০০ টাকা দাবি করছেন।'

একই উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, বৃষ্টির অপেক্ষা করায় চারা রোপণে তার ১০-১৫ দিন দেরি হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, 'এখন খরচ বেশি হলেও বাড়তি সেচ দিয়ে চারা রোপণ শুরু করেছি।'

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, জুলাইয়ে দেশে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তা স্বাভাবিক ৫০৭ মিলিমিটারের তুলনায় অনেক কম।

দেশে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। এরপর বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনায়।

গত বছরের জুলাইয়ে দেশে বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টির রেকর্ড হয়। তা গত ৪১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।

অনেক কৃষক আশঙ্কা করে বলেছেন, কম বৃষ্টির কারণে আমনের চারা দেরিতে রোপণ করায় ফলন কম হতে পারে।

চলতি আমন মৌসুমে ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে ৫৬ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী ডেইল স্টারকে জানান, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত সার্বিক লক্ষ্যমাত্রার ২৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত চারা রোপণের হার বেশি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা আশাবাদী যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। গত কয়েক দিন ধরে কয়েকটি জায়গায় কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রয়োজনে সেচের ব্যবস্থা করা হবে।'

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) প্রধান প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) শিবেন্দ্র নারায়ণ গোপ ডেইলি স্টারকে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১৭ লাখ সেচ পাম্পের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চালু আছে।

'প্রয়োজনে জমিতে যাতে সেচ দেওয়া যায় সেজন্য পাম্প প্রস্তুত রাখতে মাঠ অফিসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পাম্পগুলো চালু রাখব। আমন চাষে কোনো প্রভাব পড়বে না।'

আমন মৌসুম থেকে ভালো ফলন নিশ্চিত করতে বাড়তি সেচ নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় গতকাল বিএডিসি, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সমন্বিত উদ্যোগ নিতে বৈঠক করেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'যখনই এবং যেখানেই প্রয়োজন হবে সেখানে সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করা হবে। গত মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছিল। এবারও তা নিশ্চিত করতে আমরা ভালোভাবে প্রস্তুত।'

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে জানান, জুলাইয়ে দেশে বেশ কয়েকটি তাপপ্রবাহ ছিল।

'আগস্টেও তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা আশা করছি, এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

16h ago