প্রতিকূল আবহাওয়ায় কমেছে কাঁচা মরিচের উৎপাদন

কাঁচা মরিচ
ছবি: সুমন আলী/স্টার

এ বছর দেশে কাঁচামরিচের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

গত ১ জুলাই কাঁচা মরিচের খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা ছুঁয়েছিল। কয়েক দিন পর তা ১২০ থেকে ১০০ টাকায় নেমে আসে।

একই সপ্তাহে কাঁচা মরিচের প্রতি কেজির দাম প্রায় ২৮০ টাকায় পৌঁছেছিল। বর্তমানে তা প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় স্থির আছে।

গত ২৫ জুন সরকার ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণে সীমিত সময়ের জন্য কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়।

শুধু বাংলাদেশে নয়, উৎপাদন কম হওয়ায় গত সপ্তাহে প্রতিবেশী ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে কাঁচা মরিচ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪০০ রুপিতে।

ভারতের কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম উৎপাদনের একটি প্রধান কারণ হলো প্রতিকূল আবহাওয়া। কাঁচা মরিচ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বা নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় উৎপাদিত হয়।

এদিকে, ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষি বিশেষজ্ঞরাও একই কথা বলছেন।

বগুড়ার শিবগঞ্জ ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি দীর্ঘ সময় তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় এবং কম বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কাঁচা মরিচ
বগুড়ার শিবগঞ্জে মরিচের খেত। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষক আসিফ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ করে ৩ বিঘা জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ করেছি।'

'গত বছর একই জমিতে মরিচ চাষ করে ১৮০ মন কাঁচা মরিচ পেয়েছিলাম। তা বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা পাই। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১০ মনের কম কাঁচা মরিচ পেয়েছি। তা বিক্রি করে কেবল খরচটা তুলতে পেরেছি। কোনো লাভ হয়নি,' যোগ করেন আসিফ আহমেদ।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঘড়িয়া গ্রামের চাষি ফেরদৌস আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কম বৃষ্টি ও গরমের কারণে গাছের পাতা কুঁচকে যাচ্ছে। ফুল ও ফসল শুকিয়ে ঝরে পড়ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বছর দেড় বিঘা জমি থেকে প্রায় ১০০ মন মরিচ পেয়েছি। এবার পেয়েছি ৪-৫ মন।'

তার মতে, সঠিক ফলন না পাওয়ায় কাঁচা মরিচের উচ্চমূল্য তার মতো কৃষকদের জন্য খুব একটা সুবিধা বয়ে আনেনি।

একই উপজেলার কৃষক খাজা শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মরিচ গাছের পাতা ঠিক রাখতে এ বছর ২০ শতক জমিতে ৪ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করছি। তাতেও সমাধান হচ্ছে না।'

'স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাসহ কেউই আমাদের ফসল বাঁচাতে সঠিক পরামর্শ দিতে পারছেন না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'কীটনাশকের দোকানদাররা যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন সেভাবে খেতে ওষুধ দিচ্ছি। গরম আবহাওয়ায় এ বছর মরিচ চাষিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

কাঁচা মরিচ
শিবগঞ্জে মরিচের যত্ন নিচ্ছেন কৃষক। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

চলতি মৌসুমে দেশের সবচেয়ে বেশি মরিচ উৎপাদনকারী জেলা মেহেরপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রায় ৩ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় ১৫০ হেক্টর কম।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর খরার কারণে চাষাবাদ ও ফলন উভয়ই কমে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না।'

এ বছর বগুড়ায় কৃষকরা ৭২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। গত মৌসুমের তুলনায় তা ১২০ হেক্টর কম।

তবে রংপুরের পরিস্থিতি ভিন্ন। গত বছর কৃষকরা সেখানে ১ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করলেও এ বছর চাষ করেছেন ১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে। রংপুরের আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা থাকায় ফলন খুব বেশি কমেনি বলে দাবি করেছেন রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বগুড়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকরা সাধারণত প্রতি হেক্টর থেকে ১২ টন কাঁচা মরিচ পেলেও এ বছর তাপমাত্রা বেশি থাকায় উৎপাদন কমেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'চলতি মৌসুমে উৎপাদন কতটা কমেছে তা এখনো হিসাব করিনি। জমিতে এখনো মরিচ আছে। তবে এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের খরা ও তাপমাত্রা-সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করতে হবে। অথবা পলিনেট হাউস তৈরি করে মরিচ চাষ করতে হবে। পলিনেট হাউস তৈরি কৃষকের জন্য সহজ নয়।'

বগুড়ায় মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো মরিচের চারা উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না।'

'সাধারণত তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে মরিচের ফুলের পরাগায়ন ব্যাহত হয়। এই মৌসুমে অনেক দিন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির বেশি থাকায় ফলন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
VAT changes by NBR

NBR revises VAT, SD on 9 items following public outcry 

NBR said it has slashed VAT on ready-made clothes, restaurants, sweets, non-AC hotels and motor workshops and mostly restored to the previous levels

1h ago