প্রধান ৪ খাতে রপ্তানি কমেছে, অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা

রপ্তানি কমছে
চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

তৈরি পোশাক ও কয়েকটি অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হলেও অন্য ৪ প্রধান খাতে রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

ইউরোপের মতো বড় বাজারগুলোয় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের হিমায়িত ও টাটকা মাছ, কৃষিপণ্য, চামড়া ও চামড়ার জুতা এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, চিংড়িসহ হিমায়িত ও টাটকা মাছের চালান থেকে প্রাপ্ত আয় গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কমে ৪২ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, লবণাক্ত পানির চিংড়ি সংগ্রহের মৌসুম মে মাসে শুরু হয় এবং সে সময়ে সাধারণত ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যায়। এ বছর প্রতিকূল আবহাওয়া ও কম দামের কারণে হিমায়িত ও টাটকা মাছ থেকে রপ্তানি আয় কমেছে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সাবেক সভাপতি মো. আমিন উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় তাপপ্রবাহের কারণে চিংড়ির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

'এ ছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের প্রধান বাজারগুলোয় চিংড়ির চাহিদা কমে যাচ্ছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সব ধরনের চিংড়ির দাম কমেছে।'

যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি সংকটে পড়েছে।

তিনি জানান, চিংড়ি যেহেতু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয়, সেহেতু ইউরোপের বাজার এর চাহিদা কমেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে হিমায়িত ও টাটকা মাছ থেকে রপ্তানির প্রায় ৫ ভাগের ৩ ভাগ ছিল চিংড়ি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা দ্বিতীয় বছর এই খাতে রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল। গত অর্থবছরে তা ১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্যের ওপর ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ এবং কাঁচা পাটের উচ্চমূল্য এসব পণ্যের চালানকে প্রভাবিত করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশে কাঁচা পাটের দাম মনপ্রতি ৬ হাজার টাকার বেশি হলেও অনেক ক্রেতা সুতার বিকল্প হিসেবে তুলা বর্জ্য ও সিনথেটিক ফাইবারের দিকে ঝুঁকছেন।'

গত সপ্তাহে বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক ডেইলি স্টারকে জানান, তুরস্ক ও অন্যান্য দেশের কার্পেট প্রস্তুতকারকদের কাছে পাটের সুতা ও টুইনের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ সবের চালান কমেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মন্দায় উন্নত দেশগুলোয় কার্পেটের ব্যবহার কমেছে।

বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের অন্যতম বৃহৎ বাজার সুদানে গৃহযুদ্ধের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সেখানে রপ্তানি কমেছে।

পাট শিল্পের অন্যান্য উপখাতগুলোর মধ্যে পাটের সুতা ও টুইন থেকে রপ্তানি আয় সবচেয়ে বেশি কমেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পাটের সুতা রপ্তানি ২৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

কৃষিপণ্যের মধ্যে চা, তামাক ও মশলার রপ্তানি আয় বাড়লেও শুকনো খাবারসহ অন্যান্য পণ্য থেকে রপ্তানি আয় কমেছে।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ থাকায় কৃষিপণ্য থেকে সামগ্রিক রপ্তানি আয় কমেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ আসত সুগন্ধি চাল থেকে। এখন তা রপ্তানি না হওয়ায় আয় কমছে।'

বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উড়োজাহাজের ভাড়া ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবজি রপ্তানিও কমেছে।'

তার মতে, 'উচ্চ উত্পাদন খরচের কারণে আমরা প্রতিযোগিতামূলক দামে কৃষিপণ্য সরবরাহ করতে পারছি না।'

ইপিবির তথ্যে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়ার জুতা রপ্তানি কমেছে। রপ্তানিকারকরা এর আগে বলেছিলেন যে ইউরোপ থেকে অর্ডার কম আসায় এই খাতে রপ্তানির এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

চামড়া খাত থেকে উৎপাদিত রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অবদান ফুটওয়্যারের। তবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭০ কোটি ৩০ লাখ ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৯ শতাংশ কম।

চামড়া রপ্তানি ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলারে।

বিএফএফইএর মো. আমিন উল্লাহ ও বিজেএমএর আবুল হোসেন যুদ্ধ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সংশ্লিষ্ট খাতে রপ্তানি আয় পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডেইলি স্টার বলেন, 'তৈরি পোশাক বহির্ভূত খাতে রপ্তানি কমে যাওয়া দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।'

'যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে তবে তা দেশের কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ কারখানার মালিকরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চাকরি থেকে কর্মী ছাঁটাই করতে পারেন,' যোগ করেন তিনি।

ডলার সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় এবং উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু পণ্যের রপ্তানি কমেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অর্থনীতিবিদরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

14h ago