কমেছে চামড়ার দাম, ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কা
গত ২-৩ মাস আগের তুলনায় বর্তমানে কাঁচা চামড়ার দাম কম। আসছে ঈদুল আজহায় চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন দেশের অন্যতম চামড়ার আড়তের একটি সাভারের হরিণধরা এলাকার ব্যবসায়ীরা।
দাম কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়ার বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। বেড়েছে পরিবহন ও শ্রমিকের খরচ। সেই সঙ্গে বেড়েছে লবণের দামও। পাশাপাশি, চামড়া প্রক্রিয়াজাতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের দাম বেড়েছে।
বর্তমানে গরুর চামড়া প্রতি বর্গ ফুট ৩৫ টাকা, ছাগলের চামড়া প্রতি পিচ ২০-২৫ টাকা ও খাসির চামড়া প্রতি পিচ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ২-৩ মাস আগেও গরুর চামড়া ৪০-৪৫ টাকা, ছাগলের চামড়া ২০-২৫ টাকা ও খাসির চামড়া ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ ট্রেডার্সের মালিক জহুরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত মৌসুমে যে দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে এবারও তেমনি হবে বলে মনে হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রির সম্ভাবনা নেই। গত মৌসুমেও চামড়ার দাম ভালো ছিল না।'
তিনি আরও বলেন, 'অনেক ট্যানারি মালিক গত মৌসুমে চামড়া বিক্রির টাকা এখনো পরিশোধ করেননি। এটা ব্যবসায়ীদের জন্য একটা বোঝা।'
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়ার দাম কম হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণে হলো—নির্ধারিত কয়েকটা প্রতিষ্ঠানকে ওয়েট ব্লু (পশুর শরীর থেকে চামড়া ও পরে পশম ছাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পরের চামড়া) চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়া।
নূরনবী ট্রেডার্সের ম্যানেজার খাজা মঈনুদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর চামড়ার সরবরাহও কিছুটা কম। ঈদের বাজার কেমন যাবে তা এখনই বলা কঠিন। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেবো এবার কত সংখ্যক চামড়া কিনবো।
তার মতে, সবকিছুই সামনের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। কয়েকটা দিন গেলেই পরিস্থিতি বোঝা যাবে।
একই বাজারের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক ইয়াকুব আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, '৬০ কেজি বস্তার যে লবণের দাম ৩ মাস আগেও ছিল ৫৫০ টাকা এখন তা ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেমিক্যালের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। পরিবহন খরচ গত ৬/৭ মাসে ৬০ শতাংশ বেড়েছে।'
চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঈদুল আজহার আগে চামড়া ব্যবসায়ীদের ৩ সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হাইড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে বলে জানা গেছে।
গত বছর রাজধানী ঢাকায় লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম গরুর প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
'সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে বাজারে সেই দামে চামড়া বিক্রি হয় না বরং তার চেয়ে কম দামে বিক্রি হয়,' বলেন জহুরুল ইসলাম।
হরিণধরা বাজারে গরু, মহিষ ও ছাগলের কাঁচা চামড়া কেনা-বেচার ৭০টিরও বেশি দোকান আছে। ২০১৯ সালে বাজারটি প্রতিষ্ঠা হয়।
এই বাজারের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, 'কোরবানিতে প্রচুর চামড়া কেনার পরিকল্পনা ব্যবসায়ীদের আছে। চামড়া পাচার বন্ধে সরকার কঠোর হলে বাজার ভালো হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'কোরবানির মৌসুমে এই বাজারে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার বেশি চামড়া কেনা-বেচা হয়ে থাকে। কম করে হলেও ১০ লাখ পিচ কেনা-বেচা হয়। এই বাজারকে কেন্দ্র করে প্রায় ১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।'
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চামড়ার চাহিদা বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় আসন্ন ঈদুল আজহায় চামড়ার দাম ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ। গত বছরের তুলনায় এটি ২ লাখ বেশি। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখওয়াত উল্লাহ ডেইলি স্টারকে জানান, ঈদুল আজহায় তারা ১ কোটি পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন।
Comments