আমদানি শুরু হওয়ায় পেঁয়াজের দাম কমেছে

পেঁয়াজ, আমদানি, ভারত, পাবনা,
সোমবার দেশি পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ছবি: স্টার

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার একদিন পর, গতকাল বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের দাম কমেছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সোমবার দেশি পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। যা রোববারের খুচরা দামের চেয়ে ১০ টাকা কম।

গত মাসে দেশি জাতের পেঁয়াজের দাম ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তবে, বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান দাবি করেন, আমদানির অনুমতি পাওয়ার পর পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বেশি মুনাফার জন্য বাজারে কারসাজি করছে।

তিনি বলেন, 'পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা এক মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আমদানির অনুমতি দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তখন অনুমতি দেওয়া হলে ভোক্তাদের ভোগান্তি কম হতো।'

তিনি বলেন, 'উচ্চ মূল্যের সুফল কৃষক নয়, ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন।'

শফিকুজ্জামান বলেন, 'যেহেতু ফসল কাটার মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। তাই কৃষকদের কাছে খুব বেশি পেঁয়াজ মজুত নেই। বরং ব্যবসায়ীরাই মজুত করে বাজারে কারসাজি করেছে।'

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনায়। এই জেলার কৃষকদের দাবি, পেঁয়াজের অস্থিতিশীল বাজারের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাইকাররা দায়ী।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি কামরুজ্জামান বলেন, 'এসব অঞ্চলের বড় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পর্যাপ্ত মজুত না করা পর্যন্ত তারা স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে পেঁয়াজ কিনে থাকেন।'

তিনি আরও বলেন, 'বেশিরভাগ পেঁয়াজ যখন তাদের মজুতে থাকে, তখন বাজারে কারসাজি শুরু করেন।'

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, 'গত এক মাস ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সুযোগ নিয়েছে একদল অসাধু ব্যবসায়ী। বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আমদানি অব্যাহত থাকবে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকায় নেমে এলে আমরা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করব।'

ঢাকা, পাবনা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, রোববারের ঘোষণার পর প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম কমেছে ২৫০-৩০০ টাকা।

রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ মাজেদ জানান, শনিবার প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১৫০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়।

তিনি দাবি করেন, কম দামের ভারতীয় পেঁয়াজ স্থানীয় বাজারে এলে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, 'সব খরচ মেটানোর পর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ২০ টাকা হবে।'

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম দিনে (৫ জুন) ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ২১০টি আবেদনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

ভোমরা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টসের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপংকর ঘোষ জানান, গতকাল ভারত থেকে ৩৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভোমরা স্থলবন্দরে এসে পৌঁছেছে।

সম্প্রতি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেলে গত ১৪ মে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে অনুরোধ জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় উৎপাদনকারীদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ বছর দেশীয় উৎপাদন ছিল প্রায় ৩৪ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু, মজুত সুবিধার অভাবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে, দেশে এখনো প্রায় ৬.৫০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Protests disrupt city life, again

Protests blocking major thoroughfares in Karwan Bazar and Shahbagh left the capital largely paralysed

19m ago