বিদ্যুৎচালিত গাড়িই ভবিষ্যৎ

ভারতের টাটা মোটরসের ডিজাইন করা বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো গত সপ্তাহে ১৬তম ঢাকা মোটর শোতে প্রদর্শিত হয়। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

প্লাগ-ইন হাইব্রিডসহ বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) আগামীতে বাংলাদেশের অটোমোবাইল বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে। গাড়ি আমদানিকারক ও পরিবেশকরা বলছেন, বিকল্প জ্বালানিচালিত গাড়ির চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া শুরু হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর থেকে টেসলা ও পোর্শের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের প্রায় ২০টি বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন করা হয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ)।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে আমদানি হওয়ায় মোট যাত্রীবাহী গাড়ির প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই প্লাগ-ইন হাইব্রিড কিংবা হাইব্রিড গাড়ি।

টাটা মোটরসের স্থানীয় পরিবেশক নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেন, 'ঢাকা অটো শোতে দেখানোর জন্য আমরা টাটা ইভি আমদানি করেছি।'

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় নিটল-নিলয় গ্রুপের প্রস্তাবিত প্ল্যান্টে ইভি উত্পাদন শুরু করার পরিকল্পনা করেছেন আবদুল মাতলুব আহমেদ।

তিনি ইভি নীতিমালা প্রণয়নে দেরি হওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করে জানান, আমদানি করলে যে গাড়ির খরচ পরবে ২৯ লাখ টাকা, সেটা সাড়ে ১২ লাখ টাকায় স্থানীয়ভাবে তৈরি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, 'এই নীতিতে কর ছাড়ের মতো প্রণোদনা দেওয়া হলে ইভি উত্পাদনে বিপুল পরিমাণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।'

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, 'জটিল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, চার্জিং স্টেশনের অভাব এবং ফসিল ফুয়েল গাড়ির তুলনায় বেশি দাম হওয়ায় ইভি আমদানির গতি বাড়েনি।'

তবুও, পরিবেশ বান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় যাত্রীবাহী গাড়ির বাজারে ইভি প্রাধান্য পাবে বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বর্তমানে ইভি আমদানিতে ৭২ শতাংশ শুল্ক এবং ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক নেয়।

ইভির দাম কমিয়ে এ ধরনের গাড়ির চাহিদা বাড়াতে এসব কর প্রত্যাহারের দাবি জানান বারভিডা সভাপতি।

তিনি বলেন, 'অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো নিয়মিত গাড়ির চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি দামী।'

তিনি আরও বলেন, 'আধুনিক এই যানগুলোকে স্বাগত জানানোর সময় এসেছে। কারণ আগামী ১৫ বছরের মধ্যে পুরো বিশ্ব জীবাশ্ম জ্বালানিতে চলা গাড়ির ব্যবহার ও উৎপাদন পর্যায়ক্রমে শেষ করবে।'

বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জানান, তারা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা গাড়ির নিবন্ধন দিতে সিসি হিসাব করেন। তবে, ইভির ক্ষেত্রে হিসাব করা হয় ব্যাটারি।

অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে আগামীতে দেশে ইভির সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

এ ছাড়া, বিআরটিএ ইভি চার্জিং স্টেশনের মতো অবকাঠামো স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে চার্জিং স্টেশনের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য একটি কাঠামো প্রদানের জন্য 'ইলেকট্রিক ভেহিকেল চার্জিং নির্দেশিকা' প্রস্তুত করা হয়েছে।

দীর্ঘ রুটে বৈদ্যুতিক বাস চালুর পরিকল্পনাও করছে সরকার। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) ভারতীয় ক্রেডিট লাইনে ১০০টি দ্বিতল ইলেকট্রিক বাস কিনবে।

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে নিজস্ব ইভি উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করায় স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এ বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি ইভি বাজারে ছাড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

সংস্থাটি টু-হুইলার, থ্রি-হুইলার, সেডান, হ্যাচব্যাক ও স্পোর্ট গাড়ি তৈরি করবে। এ ছাড়া, তারা পিক-আপ, মিনি-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন উত্পাদন করারও পরিকল্পনা করেছে।

লিথিয়াম ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক মোটর, সফটওয়্যার এবং চ্যাসিসসহ গাড়িগুলোতে ব্যবহৃত প্রায় ৬০ শতাংশ উপাদান দেশেই তৈরি করা হবে।

এ ছাড়া, ওয়ালটন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের কর্মীদের জন্য বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক বাস চালু করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Managing expectations the challenge for EC

The EC was a rubber stamp to legalise AL's usurpation of power in last three elections

2h ago