মার্কিন বাজারে আধিপত্য ধরে রেখেছে বাংলাদেশের ডেনিম

চট্টগ্রামে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের একটি কারখানায় ডেনিম কাপড় থেকে তৈরি পোশাক প্রদর্শন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে ডেনিম পণ্যের বৃহত্তম সরবরাহকারী। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

চলমান বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশের ডেনিম মার্কিন বাজারে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে।

এই বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি বছরে ৪২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়ে ৭৩৮ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইউএস অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটিএক্সএ) তথ্য অনুযায়ী, ১ বছর আগের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫২০ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার।

ডেনিমে চীনকে ছাড়িয়ে ২০১৭ সালে ইউরোপীয় বাজার জয় করে বাংলাদেশ এবং ২০২০ সালে মার্কিন বাজারে বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশটিকে ছাড়িয়ে যায়।

পোশাক রপ্তানিতে প্রধান পণ্যের মধ্যে ডেনিম অন্যতম। বর্তমানে ইউরোপের প্রতি ৩ জন গ্রাহকের একজন বাংলাদেশে তৈরি ডেনিম পোশাক পড়েন।

স্থানীয় উদ্যোক্তারা বৈশ্বিকভাবে পরিবর্তিত ফ্যাশন লক্ষ্য করে এই সুযোগ গ্রহণ করার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করেন। তাদের এই বিনিয়োগ এবং এই খাতে দেওয়া শ্রম সফল হয়েছে।

বাংলাদেশের ৪০টি কারখানা মাসে ৮০ মিলিয়ন ইয়ার্ড ডেনিম কাপড় উৎপাদন করতে পারে এবং এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বব্যাপী ডেনিম বাজারে দেশের শেয়ার ২৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং এই হার বাড়ছে।

জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম রপ্তানিতে দ্বিতীয় ছিল মেক্সিকো। তাদের রপ্তানি বছরে ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে ৫৬১ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ওটিইএক্সএ এর ডেটা অনুযায়ী, পাকিস্তান ছিল তৃতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। তাদের রপ্তানি ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে ৩৭৬ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

৩৪৮ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ডেনিম রপ্তানি করে ভিয়েতনাম রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে।

চীন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় পোশাক সরবরাহকারী হওয়া সত্ত্বেও, মার্কিন বাজারে তাদের অবস্থান ভালো নয়। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিমের চালান মাত্র ৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে ২৯১ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

বিশ্বের এই ২ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মধ্যে টানা শুল্ক যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য পতনের প্রধান কারণ। এর ফলে বাংলাদেশের মতো পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য সুযোগ বেড়েছে। কারণ, চীন থেকে এসব পণ্যের অর্ডার অন্যান্য দেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ডেনিম পণ্য প্রস্তুতকারী শাসা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদের মতে, বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে অনেক মার্কিন খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ড স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি ডেনিম নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, 'যদি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবে রূপান্তরিত হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম রপ্তানি আরও বাড়তে থাকবে।'

তিনি জানান, বাংলাদেশ ডেনিম পণ্যের প্রচুর অর্ডার পাচ্ছে। তবে সেগুলোর বেশিরভাগই নিম্নমানের পণ্য।

বাংলাদেশ মার্কিন ডেনিম আমদানিকারকদের কাছে বাংলাদেশ প্রেয় হওয়ার আরও একটি কারণ দেশের সবুজ কারখানা এবং পরিবেশগত মান মেনে চলা।

ওটিইএক্সএ এর ডেটা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাসে ৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডেনিম কাপড় আমদানি করেছে, যা আগের তুলনায় ২৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, 'সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে ডেনিমের চালানে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। তবে ক্রেতাদের মাঝে আমরা আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি। আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে রপ্তানি বাড়বে।'

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গত এক দশকে বাংলাদেশে ডেনিম খাতে ঘটে যাওয়া ৩টি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির তালিকা করেছেন।

তিনি বলেন, 'অনেক নতুন বিনিয়োগ হয়েছে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত অনেক লন্ড্রি ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং দেশে প্রচুর প্রযুক্তিগত জ্ঞানের বিকাশ হয়েছে।'

বিশ্বব্যাপী ডেনিম রপ্তানি সম্প্রসারণের বিশাল সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।

২০২০ সালে ডেনিম জিনসের বিশ্বব্যাপী বাজার অনুমান করা হয়েছিল ৫৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৭ সাল নাগাদ এই বাজার ৭৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার হবে বলে অনুমান করা হয়েছে বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের একটি সমীক্ষায়।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম জিনসের বাজার ১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হয়েছিল৷ চীন ধারণা করছে, ২০২৭ সালের মধ্যে বাজারের আকার সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারের হবে।

জাপান ও কানাডার ডেনিম বাজার ২০২০-২০২৭ সালের মধ্যে যথাক্রমে ২ দশমিক ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। , একই সময় জার্মানির ডেনিম বাজার ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে সমীক্ষাটি।

Comments

The Daily Star  | English

Parking wealth under the Dubai sun

The city’s booming real estate has also been used by Bangladeshis as an offshore haven to park wealth for a big reason

4h ago