চোখের যত্নে করণীয়

আমাদের শরীরের অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। তাই সব ধরনের ঝুঁকি এবং বিপদ থেকে এই বিশেষ অঙ্গটিকে নিরাপদ রাখতে কিছু টিপস।

খাদ্যাভ্যাস

চোখের সমস্যা এড়াতে ছোটবেলা থেকেই নিয়মমাফিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। এরপর শিশুকে ধীরে ধীরে বাড়তি খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। শাকসবজি যেমন- পাকা পেঁপে, গাজর এবং মওসুমি ফল পরিমিত পরিমাণে খাওয়াতে হবে। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের ধরন প্রায় একই। ছোট মাছ, সবুজ শাকসবজি এবং মওসুমি ফল চোখের জন্য বিশেষ উপকারী।

ঘুম ও বিশ্রাম

সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে কমপক্ষে দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন, তবে ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী এর বিভিন্নতা দেখা যায়। কায়িক শ্রমের ক্ষেত্রে ৪৫ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পরপর ১০-১৫ মিনিটের বিরতি নেয়া উচিত। এতে শুধু চোখই নয়, বরং পুরো শরীরের বিশ্রাম হয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, কম্পিউটারে কাজের ক্ষেত্রে ‘২০-২০-২০ রুল’ অবলম্বন করা উচিত। অর্থাৎ, প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের বিরতি নিতে হবে এবং বিরতি চলাকালীন কমপক্ষে ২০ ফুট দূরে তাকাতে হবে। ফলে চোখের বিশ্রামের পাশাপাশি ঘাড় ও পিঠের ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

টেলিভিশন ও কম্পিউটারের মনিটর থেকে চোখের দূরত্ব

কম্পিউটারের আকারের ওপর মনিটর থেকে চোখের দূরত্ব নির্ভর করে। সাধারণত কম্পিউটারের মনিটর হতে চোখের দূরত্ব ৩ ফুট এবং টেলিভিশনের মনিটর থেকে ১০ ফুট হওয়া উচিত। অনেক সময় শিশুরা খুব কাছ থেকে টেলিভিশন দেখে থাকে, এমনটি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

তীব্র রোদ এবং ভাইরাল ইনফেকশন থেকে বাঁচার উপায়

তীব্র রোদের কারণে অনেক সময় চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, এ সময় চোখে অস্বস্তিবোধ হতে পারে। রোদে ঘন ঘন চোখের পাতা ফেললে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষার জন্য সানগ্লাসের ব্যবহার বেশ উপকারী এবং যারা পাওয়ার-চশমা ব্যবহার করেন তারা ফটোসান ব্যবহার করতে পারেন। খাবার ও ধুলোবালির মাধ্যমেও অ্যালার্জিজনিত বা ভাইরাল ইনফেকশন হতে পারে। এক্ষেত্রে, সানগ্লাস ও ছাতা ব্যবহার করা উচিত এবং বাইরে থেকে এসে চোখ পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ভাইরাল ইনফেকশন হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং ব্যবহৃত রুমাল বা অন্যান্য জিনিস আলাদা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে যেন অন্যদের চোখে রোগের সংক্রমণ না হয়।

কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার

আজকাল চশমার পরিবর্তে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর চোখের প্রয়োজনে চিকিৎসক তা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার এবং ব্যবহার শেষে জীবাণুমুক্ত করে সলুশনে ডুবিয়ে লেন্স সংরক্ষণ করতে হবে। তবে চোখ লাল হওয়া, পানি পড়া, ময়লা জমা- এ জাতীয় উপসর্গ দেখা দিলে লেন্স ব্যবহার করা যাবে না এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

চোখের সমস্যা সাধারণভাবে বোঝার উপায়

চোখে সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যেটি বোধ হয়, তা হলো দৃষ্টি কমে যাওয়া। সাধারণত চোখ থেকে পানি পড়া, ময়লা জমা, চোখে ব্যথা বা লাল হওয়া এসব উপসর্গের ভিত্তিতে চোখের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়।

বিশেষ সতর্কতা

অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত আই ড্রপ ব্যবহার একেবারেই অনুচিত। আই ড্রপ খোলার এক মাসের মধ্যেই ব্যবহার করতে হবে, এরপর  ফেলে দিতে হবে। বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা এবং চোখের যেকোনো সমস্যায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ আবশ্যক।

পরামর্শদাতা:

ডা. দেওয়ান মো. ইকবাল জাররাহ

মেডিক্যাল অফিসার

বাংলাদেশ আই হসপিটাল, ঢাকা

Comments

The Daily Star  | English

Strikes on Iran mark Trump's biggest, and riskiest, foreign policy gamble

The dramatic US strike, including the targeting of Iran’s most heavily fortified nuclear installation deep underground, marks the biggest foreign policy gamble of Trump’s two presidencies and one fraught with risks and unknowns.

1h ago