​প্রেম খুব প্রয়োজন

মডেল: জোভান ও ঐশী; ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

শুধু প্রেম, ভালোবাসা, সম্পর্ক, ব্রেকআপ নিয়ে কথা বলেছেন তরুণ অভিনেতা, মডেল জোভান ও কণ্ঠশিল্পী ঐশী। আড্ডায় দু’জন অকপটে স্বীকার করেছেন তাদের প্রেম, অপ্রেম, বিচ্ছেদ, পছন্দের সঙ্গীসহ ভালোবাসার অনেক কিছু। 

জাহিদ আকবর : প্রেমটা কীভাবে দেখো তোমরা?

জোভান : প্রেম একটা মানুষকে অনেক কিছু শিক্ষা দিতে সাহায্য করে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। প্রেমে মানুষ অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। প্রেম খুব দরকার একটা মানুষের জীবনে। ভালো হোক, মন্দ হোক প্রেম খুব প্রয়োজন মানুষের। সবার জীবনেই প্রেম আসে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এটা পজেটিভ দেখা উচিত।

ঐশী : চারপাশ দেখে বুঝেছি, অনুভব করেছি প্রেমটা অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রেম মানুষকে অনেক শক্তি দেয়।

জোভান; ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

জাহিদ আকবর : সোশ্যাল মিডিয়ার এই সময়ে প্রতিনিয়ত প্রেম ভাঙছে। নতুন প্রেমে জড়াচ্ছে একে অপরের সঙ্গে। প্রেমটা এখন দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। খুব অল্প সময়ের জন্য হচ্ছে প্রেমটা। সবাই কেমন অস্থির। এটা কেন?

জোভান : সবকিছু সহজলভ্য হয়ে গেছে তাই। সবকিছু হাতের মুঠোয় পেয়ে যাচ্ছি। পুরো দুনিয়াটা পেয়ে যাচ্ছি। তাই হাতের মুঠোয় খুব সহজে আমাদের সঙ্গীও পেয়ে যাচ্ছি। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ভাইবারে আমরা একজনের সঙ্গে দু’দিন কথা বলার পরেই তিন দিনের দিন দেখা করতে চলে যায়। কিংবা যাচ্ছি। আগে তো এমন ছিল না। আগে দেখা করতে হলে অনেক দিনের অপেক্ষা থাকত। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। এছাড়া আমার আশপাশের বন্ধু-বান্ধবকেও দেখছি। দু’দিনের মাথায় দেখা, তিন দিনের মাথায় ঘোরাঘুরি চার দিনের মাথায় গিয়ে ব্রেকআপ হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু সহজলভ্যতার কারণে। আগে যেমন চিঠির যুগ ছিল। সবকিছু তখন অনেক দীর্ঘস্থায়ী হতো। সবকিছু অনেক পিওর হতো। এখন খুব জলদি হয়ে যাচ্ছে।

ঐশী : আগে দীর্ঘস্থায়ী হতো তার কারণ সবকিছু অনেক দেরিতে হতো। এখন সবকিছু অনেক দ্রুত হচ্ছে। সহজে হচ্ছে বলেই সহজে ভেঙে যাচ্ছে। এখন দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার কারণ, একজনের সঙ্গে দু’তিন দিন মিশলেই সবকিছু জানা যায় না, আন্ডারস্টান্ডিং হয়ে যায় না। আগে বন্ধুত্ব হতো, তারপর ভালোবাসাবাসির ব্যাপারটি হতো। সেই কারণে বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না। প্রেমে আগে ভালো একটা বন্ধুত্ব থাকতে হবে।

জোভান : প্রেমটাও এখন সেলফিশ হয়ে গেছে।

ঐশী : আগে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বে কী হয়? বন্ধু একটা খারাপ কাজ করলে তাকে নিষেধ করা যায়। তাকে ভালোর দিকে নিয়ে আসা যায়। প্রেমে বন্ধুত্ব থাকছে না বলেই এখনকার সম্পর্কগুলো খুব বেশি দিন স্থায়ী হচ্ছে না।

ঐশী; ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

জাহিদ আকবর : তোমাদের নিজেদের প্রেম, সম্পর্ক নিয়ে বলো।

জোভান : আমার প্রেম অবশ্যই ছিল। একাধিক প্রেম ছিল। তবে এখন কোনো রিলেশনশিপে নেই। ব্রেকআপ একেক কারণে একাধিকবার হয়েছে। অনেক কারণ থাকে। আন্ডারস্টান্ডিং হয় না। এই কারণে সম্পর্কগুলো ভাঙে, ভেঙে যায়।

ঐশী : আমি ছোট মানুষ। পড়াশোনা আর গানের বাইরে আর কারো সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। তবে ক্লাস সিক্সে যখন পড়ি তখন ফার্স্ট প্রপোজাল পাই। তখন আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমাকে খুব ধমকিয়ে প্রপোজ করা হয়েছিল। আর যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন কেউ একজন আমাকে গোলাপ দিয়েছিল। গোলাপ পেয়ে ভয়ে কান্না করেছিলাম। একা ছিলাম তাই কান্না করেছিলাম।

জাহিদ আকবর : প্রেমের মানুষের কাছ থেকে কী উপহার পেতে ভালো লাগে?

জোভান : আমি কি আর গিফট চাই নাকি? ভালোবেসে যেটা দেয় সেটাই আমার সেরা উপহার।

ঐশী : আমার আরেকটা ঘটনা আছে। অনেকেই আমাকে পছন্দ করত। আমি পাত্তা দেই না। স্কুলে থাকতে দুটো গ্রুপের দু’জন আমাকে পছন্দ করত। একজন যখন জানাল, অন্য গ্রুপের আরেকজনও আমাকে পছন্দ করে। আমার পেছনে সাইকেল নিয়ে ঘুরত। একদিন অন্য গ্রুপের ছেলেরা সাইকেল ভেঙে দিয়ে চলে গেল। দু’জনের মধ্যে মারামারি হয়েছে অনেকবার। তাদের কেউ আমাকে পায়নি।

জোভান : ভাগ্য ভালো আমার। মেয়েরা-মেয়েরা কিন্তু মারামারি করে না। প্রথমে আমি যে মেয়েকে প্রপোজ করেছিলাম, তখন আমার মুখ, কলিজা সব শুকিয়ে গিয়েছিল। তখন ক্লাস টেনে পড়ি। ক্লাস নাইনের একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছিলাম। প্রথম প্রপোজে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছিলাম। মেয়েটা আমাকে রিফিউজ করেছিল। এটা আমার জন্য অনেক মন খারাপের একটা ব্যাপার ছিল।

ঐশী : আমার জন্য যে ছেলেটার সাইকেল ভেঙেছিল। বিষয়টি যেহেতু আমার জন্যই ছিল, এটা ভেবে আমার এখনো মন খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপটা এখনো আছে।

জোভান ও ঐশী; ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

জাহিদ আকবর : তোমাদের মনের মধ্যে কল্পনার কোনো মানুষ আছে?

জোভান : আমার লাইফ নিয়ে এখন আমি অনেক সিরিয়াস হয়েছি। যেহেতু আমি বড় ছেলে। এখন যদি কোনো মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্ক হয় অ্যারেঞ্জডলি যেতে চাচ্ছি পারিবারিকভাবে। এটাই আমার শেষ প্রেম হবে। আমি চাই ঘরোয়া একটা মেয়ে। আমাকে, আমার প্রফেশনটাকে রেসপেক্ট করবে। মা এবং পরিবারের সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হবে। এমন একটা মেয়ের স্বপ্ন দেখছি।

ঐশী : আমি তো বাচ্চা মানুষ। আমার রাজকুমারের মতো একজন ছেলে পছন্দ। যদি রিয়েলিটি থেকে বলি আমার বাবা-মা আমার জন্য যেটা পছন্দ করবেন সেটাই হবে। তবে আমাকে আমার মতো করে গ্রহণ করতে হবে। আমার কাজ, ডেস্টিনেশন, আমার ড্রিম তার ড্রিম হতে হবে। আমার পাশে সবসময় ছায়া  হয়ে, মায়া হয়ে থাকবে।

জাহিদ আকবর : লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট এমন কোন প্রেমের জুটিকে পছন্দ তোমাদের?

জোভান : তাদের কাউকেই আমার ঠিক পছন্দ না। তার কারণ তাদের থেকে আমরা এখন অনেক পরের। আমরা তাদের মতো এত কম্প্রোমাইজ মন নিয়ে কিছু করতে পারব না। আমরা দারুণ সেলফিশ মনের। আগের মতো এত মন খোলা, উদার হতে পারব না। বাবা-মা ছাড়া দিনের শেষে কেউ আপন নেই।

ঐশী : এসব ঘটনা শুধু শুনেছি। এসব গল্পের পুরোটা এখনো জানি না।

জাহিদ আকবর : প্রেমের গান, সিনেমার মধ্যে কোনগুলো প্রিয়?

ঐশী : উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেনের অভিনীত পুরনো দিনের গানগুলো, দৃশ্যগুলো আমার খুব প্রিয়। সুত্রিতার ঢংগুলো খুব প্রিয়।

জোভান : ইরফান খান, আমির খানের প্রেমের দৃশ্যগুলো আমার ভীষণ পছন্দের। নাইনটিজের কিছু গান আমার অসম্ভব প্রিয়। সঞ্জীব চৌধুরীর ‘আমি তোমাকে বলে দেবো’, ‘খুব ভালো লাগে’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা’ গান খুবই পছন্দের।

ঐশী : ‘যদি রহিতে না কাছে’, ‘তুমি যে আমার কবিতা’ খুবই প্রিয়।

জোভান ও ঐশী; ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

জাহিদ আকবর : এবার ভালোবাসা দিবসে কী পরিকল্পনা?

ঐশী : ভালোবাসা দিবসের দিন আমার শো আছে। শো নিয়ে ব্যস্ত থাকব।

জোভান : নিজের তিনটি নাটক আছে। বাসায় বসে দেখব। এছাড়া আমার নানা-নানুর বিয়েবার্ষিকীর ৫০ বছর উদযাপন করব। ভালোবাসা দিবসের রাতে আমরা সারপ্রাইজ দেব।

Comments

The Daily Star  | English

New uniform, monogram sans boat on the cards for police

According to police sources, a new monogram for the Bangladesh Police has already been determined. It will no longer feature a boat

5h ago