‘অনুষ্ঠানটি আমাদের সংস্কৃতির একটা ল্যান্ডমার্ক হয়ে গেছে’

Iffat Ara Dewan
শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পহেলা বৈশাখ তথা নববর্ষ উদযাপন। এই উদযাপনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘রমনার বটমূল’-এ ছায়ানটের অনুষ্ঠান। ‘ছায়ানট’ নামটি দিয়েছিলেন সংস্কৃতি-দেশমনস্ক ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদ সয়ীদুল হাসান। এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি রমনায় বাংলা বর্ষবরণের প্রথম অনুষ্ঠান করে ১৯৬৭ সালে। সেসময় অনুষ্ঠানটিতে অংশ নিয়েছিলেন ‘ছায়ানট সংগীতবিদ্যায়তন’-এর বেশ কয়েকজন সংগীতশিল্পী। অনুষ্ঠানটির পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কথা হয় তাঁদেরই একজন শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ানের সঙ্গে। তাঁর কথাগুলো দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো:

“১৯৬৭ সালে আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। ছায়ানট সংগীতবিদ্যায়তনের প্রথম ব্যাচেই ভর্তি হয়েছিলাম। রবীন্দ্রসংগীত ছিল আমার মূল বিষয়। সেসময় আমি সংগীতবিদ্যায়তনটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম। সেদিনের অনেক কথাই আজ পরিষ্কার মনে পড়ে না। পঞ্চাশ বছর আগের কথা তো!

যতটুকু মনে পড়ছে – সেদিন ভোর বেলায় সাদা শাড়ি পরেছিলাম। ছয়টার মধ্যে রমনায় পৌঁছে গেলাম। বাবার গাড়িতে চড়ে এসেছিলাম ধানমন্ডি থেকে। বাবা প্রয়াত খোরশেদ আলী দেওয়ান এবং মা সাকিনা দেওয়ান সঙ্গে ছিলেন। বাবা-মার সমর্থন ছিলো বলেই গানটা ধরে রাখতে পেরেছি। আমি তাঁদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।

অনুষ্ঠানটির জন্যে সেদিন রমনায় আলাদা কোন মঞ্চ ছিলোনা। গাছের গোড়াটা সেদিনও বাঁধানো ছিল। ইটের ফাঁক দিয়ে পিঁপড়েদের ছোটাছুটি। আস্তে আস্তে সূর্য উঠছে। এর সঙ্গে ঝিরিঝিরি বাতাস। খোঁপায় বাঁধা বেলি ফুলের মালা থেকে সুবাস আসছে – একটা চমৎকার অনুভূতি। তবে একটা টেনশনও ছিল। গানটা যেন সুন্দর করে শেষ করতে পারি।

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে – প্রথমদিন একসঙ্গে গান করেছিলাম যাঁদের সঙ্গে তাঁদের অনেকেই আজ দেশে নেই। অনেকেই আবার সংগীতের সঙ্গে জড়িত নেই। শিক্ষকদের অনেকেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। যেমন জাহিদুর রহিম, ওয়াহিদুল হক প্রমুখ।

এই মুহূর্তে মনে পড়ছে মাহমুদুর রহমান বেনু, শাহিন সামাদ, ইকবাল আহমেদ, শাকেরা আহমেদ, সেলিনা মালেক, তামান্না হক ও তৈয়বা হকের কথা। আমরা সেদিন রমনায় একসঙ্গে গান করেছিলাম।

এখন যেমন অনেক দর্শক আসেন সে তুলনায় সেদিন দর্শকের সংখ্যা কম ছিল। তবে তাঁরা সবাই ছিলেন সংগীতপ্রেমিক। অনুষ্ঠানে ১৫-২০ জনের সম্মেলক গান হয়। পঞ্চকবির গান হয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অনুষ্ঠান চলে। সবশেষে গাওয়া হয় ‘আমার সোনার বাংলা’। তখন কিন্তু এই রবীন্দ্রসংগীতটি আমাদের জাতীয়সংগীত হয়নি; হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর।

যাহোক, এরপর অনুষ্ঠানে সবাই যে শুধু গান শুনতে আসতেন তা কিন্তু নয়। এটা ছিল একটা মিলনমেলা। রমনায় গ্রামীণ আবহে আস্তে আস্তে মেলা বসতে শুরু করে। বাঁশি, পাখা, বেত ও মাটির তৈজসপত্র থাকে সে মেলায়।

এখানে এলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। তাই ধীরে ধীরে আরও বেশি লোক আসতে লাগলেন। ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে অনেক লোক এসেছিলেন বর্ষবরণের অনুষ্ঠান দেখতে। এখন এই অনুষ্ঠানটি আমাদের সংস্কৃতির একটি ল্যান্ডমার্ক হয়ে গেছে।

পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে সেই প্রথম বছর থেকেই আমি নিয়মিত গান করে আসছি। তবে দুই-একবার অংশ নিতে পারিনি। এবার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘প্রভু বলো বলো কবে’ রবীন্দ্রসংগীতটি পরিবেশন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

Comments

The Daily Star  | English

Exporters fear losses as India slaps new restrictions

Bangladesh’s exporters fear losses as India has barred the import of several products—including some jute items—through land ports, threatening crucial trade flows and millions of dollars in earnings.

4h ago