ভালোবাসা দিবসের আগেই ভালোবাসা
চলচ্চিত্র: প্রেমী ও প্রেমী
পরিচালক: জাকির হোসেন রাজু
অভিনয়: আরেফিন শুভ, নুসরাত ফারিয়া, আমজাদ হোসেন, আমান রেজা
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১৪ মিনিট
মুক্তির তারিখ: ১০ ফেব্রুয়ারি
দর্শকের মতামত: ৭/১০
প্রেমিকের জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে লন্ডন থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে বিমানে যাত্রা করেন নুসরাত ফারিয়া। কিন্তু আবহাওয়া ভীষণরকম খারাপ থাকায় চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে অবস্থান নেন তিনি। কলকাতায় আসতে হলে তাঁকে ঢাকা হয়ে আসতে হবে। সেদিন আবার পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট। কোনভাবেই কেউ গাড়ি নিয়ে ঢাকায় আসতে রাজি হয় না। একজন খারাপ মনের গাড়িচালক সুযোগটা নিয়ে ফারিয়াকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। সেখান থেকে পালিয়ে কোন মতে বান্দরবানের একটা বাড়িতে আশ্রয় নেন ফারিয়া। আরেফিন শুভ তাঁকে রক্ষা করেন। শুভদের এই বাড়িটা হলো বান্দরবানে অতিথিদের জন্য থাকার একটা হোটেল। ফারিয়া তাঁকে যে কোনভাবেই হোক কলকাতা নিয়ে যেতে বলেন। একটা পুরনো গাড়িতে শুরু হয় তাঁদের পথচলা। একসময় গাড়িটাও নষ্ট হয়ে যায়। তারপরেও, চলতে থাকে দু’জনার জার্নি। একটা সময় আরেফিন শুভ জড়িয়ে যায় প্রেমের গভীর মায়ায়। কিন্তু মুখে কিছুই বলে না সে। ফারিয়া যে কোনভাবেই প্রেমিকের জন্মদিনে কলকাতা যেতে চান। অবশেষে, তিনি পৌঁছে যান কলকাতা। দেখা হয় তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে। কী হবে তারপর আরেফিন শুভর? বাকিটা পর্দায় দেখে নিতে হবে। কারণ, ছবিটি মুক্তি পেয়েছে আজ মাত্র দু’দিন হলো।
আরেফিন শুভ প্রথম দৃশ্য থেকেই দর্শকদের মনোযোগ তাঁর দিকে নিয়ে গেছেন। অভিনয়ে দিনে দিনে দক্ষ হয়ে উঠছেন তিনি, এর স্বাক্ষর রেখেছেন ছবিটির পরতে পরতে। সিনেমার চরিত্র সীমান্ত হয়ে উঠতে খুব-বেশি সময় লাগেনি তাঁর। সংলাপ, এক্সপ্রেশন, ম্যানারিজম সবকিছুতেই শুভ’র পূর্ণতা ছিলো। পর্দায় যখন প্রথম আসেন দর্শকের উল্লাস নতুন কিছুর ইংগিত দেয়। ছবির কান্নার দৃশ্যগুলো বুকের কোথায় যেন হাহাকার তৈরি করে। একজন অভিনেতার কাজইতো সেটা। দর্শকের মনে অনেকদিন থেকে যাবে শুভর অভিনয়টা।
‘প্রেমী প্রেমী’ গানের শুরুর লুকটা অসাধারণ লেগেছে। কস্টিউম ডিজাইনে মনোযোগী ছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একজন দর্শক পাশ থেকে বললেন, “এমন স্মার্ট নায়কইতো দেখতে চায়।”
নুসরাত ফারিয়া লন্ডনে পড়াশোনা করা মারিয়া নামের একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবির চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। এমন স্মার্ট নায়িকা বাংলা সিনেমায় আরও বেশি প্রয়োজন রয়েছে। এর সঙ্গে অভিনয়ে একটু মনোযোগী হলে আরও ভালো করার সম্ভাবনা প্রবল। সংলাপ বলাতে একটু মনোযোগী হতে হবে তাঁকে। তবে নুসরাত ফারিয়া এই সিনেমায় নায়িকা হয়ে উঠেছেন। জ্যেষ্ঠ অভিনেতা আমজাদ হোসেন আর রেবেকাও মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। নুসরাত ফারিয়ার প্রেমিকের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তাঁকে অভিনয়ে আরো দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন ছিলো। শুধু দামি পোশাক গায়ে চাপালেই কি স্মার্ট হওয়া যায়?
সিনেমার একমাত্র ‘প্রেমী ও প্রেমী’ গানটা দর্শকদের মন ছুঁয়েছে। তবে একটা প্রশ্ন, সিনেমার সবগুলো গান কলকাতার একজন সুরকার দিয়েই কেন করাতে হবে? এর কারণটা ঠিক কী বোঝা গেলো না। এদেশে সুরকার শিল্পী কী কম পড়েছে? বিষয়টি নিয়ে ভাবার এখুনি সময়।
চোখ জুড়ানো লোকেশন ও দারুণ ফটোগ্রাফি ছবিটাকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। তবে জাকির হোসেন রাজুর মতো একজন স্বনামধন্য পরিচালকের নাম পোস্টারে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নিচে রাখা খুবই দুঃখজনক।
‘প্রেমী ও প্রেমী’ সিনেমার গল্পটি ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া হলিউডের ‘লিপ ইয়ার’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো হয়েছে। এখানকার পরিবেশে ও চরিত্রে গল্পটা বসানোর কাজটা যত্ন নিয়ে করেছেন পরিচালক। ভালোবাসা দিবসের কয়েকদিন আগে মুক্তি পাওয়া ভালোবাসার ছবি ‘প্রেমী ও প্রেমী’ খুব একটা মন্দ না।
Comments