কতোটা অ্যাটাকড হলো ঢাকা?

Dhaka Attack Cinema
পরিচালক দীপংকর দীপনের “ঢাকা অ্যাটাক”। ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র: ঢাকা অ্যাটাক

পরিচালক: দীপংকর দীপন

অভিনয়: আরিফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, শতাব্দী ওয়াদুদ, এবিএম সুমন, তাসকিন রহমান, নওশাবা, আফজাল হোসেন, আলমগীর ও হাসান ইমাম

কাহিনী: সানী সানোয়ার

মুক্তির তারিখ: ৬ অক্টোবর

ছবির ধরন: থ্রিলার

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২৮ মিনিট

 

কাহিনী: ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। কিন্তু কে বা কারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছে তার হদিস খুঁজে বের করতে পারছে না পুলিশ বা মিডিয়ার কেউ। এই বোমা বিস্ফোরণের খবর বের করতে তৎপর হয়ে পড়ে সবাই। পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিটের সদস্য আবিদ রহমানকে (আরেফিন শুভ) দায়িত্ব দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকেন ইউনিটের অপর সদস্য এবিএম সুমন। দায়িত্ব পাওয়ার পরও বোমা বিস্ফোরণ হয় আরও কয়েক জায়গায়।

প্রথম থেকেই এই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে থাকেন ক্রাইম রিপোর্টার চৈতী (মাহিয়া মাহি)। ঘটনার গভীরে গিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ বের করে আনাই তাঁর লক্ষ্য। এক সময় তাঁদের দুজনার (মাহি ও শুভ) মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।

পরে আবিষ্কার হয় এই সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ একজন মানুষই করছে। তাকে খুঁজতে শুরু হয় মিশন। কেন এই বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে এবং কে করছে তা পর্দায় দেখতে হবে। কেননা, ছবিটি মুক্তির আজ তিনদিন মাত্র।

বাংলাদেশের ছবিতে এমন গল্প নিয়ে প্রথমবারের মতো ছবি নির্মিত হলো। প্রথম থেকেই একটি টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে রয়েছে গল্পের পরতে পরতে। বোঝা সম্ভব হবে না কে বা কারা এসব বিস্ফোরণ করেছে। মনে হতে পারে পুলিশের এই তেলেসমাতি দেখার জন্য কেন বসে থাকবো। কিন্তু, তা দর্শকদের বসিয়ে রাখবে।

এই বসে থাকা গল্পের সুন্দর বুননের কারণে সিনেমা হলে ঢোকার আগে মনে হয়েছিলো পুলিশের এমন ডকুমেন্টারি দেখার জন্য কেন হলে যাব? কিন্তু, গল্পের ভেতরে থ্রিলার, পুলিশদের পরিশ্রম, সাহসিকতা, দেশপ্রেম, ত্যাগ, মানবিকতা সব দর্শকদের বসিয়ে রাখে। গল্পটি যিনি লিখেছেন তিনি একটি মন-ছোঁয়া কাহিনী লেখার চেষ্টা করেছেন। শুধু শুধু পুলিশের স্তুতি দিয়ে গল্প রচনা করেন নি।

আরিফিন শুভ অনেক পরিণীত অভিনয় করেছেন আবিদ রহমানের চরিত্রে। মাপা অভিনয়। পুলিশের একজন বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিটের কর্মকর্তার যেমন থাকার কথা ঠিক তেমনি থেকেছেন তিনি, একটি চরিত্র হয়ে উঠেছেন। হাঁটা-চলা, কথা বলা, পরিমিত আবেগ সবকিছু মিলিয়ে দুর্দান্ত লেগেছে তাঁকে। কিন্তু কিছু দৃশ্যে তাঁর ছোট-চুল, একটু পরেই আবার বড়-চুল খুব দৃষ্টিকটু লেগেছে। বিষয়টি পরিচালকের মাথায় রাখা উচিত ছিলো। তবে এর কোন ব্যাখ্যা নেই। পরিচালক হয়তো বলবেন অনেকদিন বাদে শুটিং হয়েছে তাই এমন হয়েছে। কিন্তু, বিষয়টি সত্যি দুঃখজনক।

মাহিয়া মাহি বাংলা সিনেমার একজন জনপ্রিয় নায়িকা। পর্দায় তাঁকে দেখতে বেশ ভালো লেগেছে। গানের দৃশ্যগুলোতে তাঁকে অনেক সুন্দর লেগেছে। তবে, একজন ক্রাইম রিপোর্টার হতে হলে তাঁর অ্যাটিটিউট কেমন হওয়া প্রয়োজন, কীভাবে, কী ধরণের প্রশ্ন করতে হয় সেটি নিয়ে একটুখানি পড়াশোনা করলে আরও অনেক উতরে যেতেন তিনি।

এদিকে, জিশান চরিত্রে অভিনয় করা তাসকিন রহমান অনেকের মনে দাগ কেটেছেন। তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে হলের মধ্যে তালি দিতে দেখা গেছে দর্শকদের। কিন্তু, কিছু কিছু জায়গায় তাঁর অতি-অভিনয় কিছুটা দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। নবীন খলনায়ক হিসেবে তিনি যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। এবিএম সুমনের অভিনয় যথেষ্ট ভালো। তবে, চরিত্রটি আরেকটু বড় হলে মন্দ হতো না।

শতাব্দী ওয়াদুদ সব সময়ের মতো যথাযথ চরিত্র হয়ে উঠেছেন। তিনি জানেন তাঁর অভিনয়ের সীমা কতোটুকু। নওশাবার যতেটা করার ছিলো করে দেখিয়েছেন। ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে  আফজাল হোসেন ও আলমগীরকে। এছাড়াও, আফজাল হোসেনের কণ্ঠটি অন্যকে দিয়ে ডাবিং করানোয় তা খুব বাজে শুনিয়েছে। অতিথি চরিত্রে হলে ঠিক আছে, কিন্তু তাঁদের অভিনয় করার কোন যুক্তি দেখা যায়নি এমন চরিত্রে। যেকোনো অভিনেতাই এটি করতে পারতেন।

আইটেম গান জোর করে ছবির গল্পে অন্তর্ভুক্ত করাকে একটি ব্যর্থ চেষ্টা বলতে হয়। এটি না থাকলেও কোন ক্ষতি হতো না। অরিজিৎ সিংয়ের গাওয়া গানটি কি খুব বেশি হৃদয়গ্রাহী হয়েছে? এটি দেশের কোন একজন শিল্পী গাইতে পারতেন।

ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফি অনেক সুন্দর হয়েছে। সিনেমা শুরু আর শেষে চট্টগ্রামের গভীর বনের দৃশ্যগুলো অসাধারণ – যা দেখে চোখ জুড়ায়। অ্যাকশন দৃশ্যগুলোও মন্দ না।

পরিচালক দীপংকর দীপন এতদিন ছোট-ফ্রেমে গল্প বললেও প্রথমবারের মতো বড়-ফ্রেমে গল্প ফাঁদলেন। যদিও তাঁর টেলিভিশন ফিকশন দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে এই ছবি দিয়ে টানটান উত্তেজনা নিয়ে দর্শকদের হলে বসিয়ে রাখতে পারছেন এটাই বা কম কী।

ছবির টাইটেলে দেখা গেছে অনেক টেকনিশিয়ান দেশের বাইরে থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি যদি পুলিশ কল্যাণ সমিতির পরিবারের পয়সায় নির্মিত না হতো, তাহলে এতো টাকা কি অন্য কোন প্রযোজক দিতে পারতেন? তবে দীপনকে ধন্যবাদ। তাঁর পরিচালনায় প্রথম ছবি দর্শকরা ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। আশা করি, চলচ্চিত্রের এমন দুর্দিনে “ঢাকা অ্যাটাক” ছবিটি আশার আলো ছাড়াবে।

Comments

The Daily Star  | English

World Bank lowers growth forecast for Bangladesh to 3.3% in FY25

The WB attributed the overall deceleration in the first three quarters of FY25 to a sharp decline in private and public investment

38m ago