এক গল্পে দুই ম্যাজিক
চলচ্চিত্র: ভালোবাসা এমনই হয়
পরিচালক: তানিয়া আহমেদ
অভিনয়: বিদ্যা সিনহা মিম, ইরফান সাজ্জাদ, মীর সাবিবর, মিশু সাব্বির, তানজিকা আমিন ও তারিক আনাম খান
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট
মুক্তির তারিখ: ২৭ জানুয়ারি
কাহিনী: প্রথম দৃশ্যে দেখা যাবে যে মিম কারো জন্য ফুল কিনে ফিরছে। চলন্ত গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সে। আর কিছুই জানা যায়না। মীর সাব্বির আর মিশু সাব্বির ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, আত্মগোপন করে লন্ডনে থাকে। একটা সময় দেখা যায় মিম সুস্থ হয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে বাড়ি ফিরছেন। তার বাবা তারিক আনাম খান একজন ব্যবসায়ী। এই বাড়িতেই থাকেন তানজিকা আমিন। কিছুক্ষণ পর বোঝা যায় তারিক আনাম খান আর তানজিকা আমিনের মধ্যকার সম্পর্কটা কী।
মাথায় ভেতর কিছু একটা শূন্যতা অনুভব করে মিম। কী সেই শূন্যতা বুঝে উঠতে পারেনা। পিটার নামের একজন বিদেশিকে বাসায় নিয়ে আসে নিজের প্রেমিক হিসেবে। ভয়ানক রাগ করেন তার বাবা। মূলত বাবার উপর রাগ করে এমন করেন মিম।
এদিকে মিমের বাবা তারিক আনাম খান ইরফান সাজ্জাদকে নিয়ে আসে তার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য। তার সঙ্গে বাসায় আসেন মীর সাব্বির আর মিশু সাব্বির। সাজ্জাদকে দেখলেই তার চাহনীতে আনমনা হয়ে যায় মিম। তাকে তার খুব পরিচিত মনে হয়। কিন্তু মনে করতে পারেনা। এভাবে একটা সময় আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে তারিক আনাম খানের। বাকিটা পর্দায় দেখে নিতে হবে। কারণ, সিনেমা মুক্তির তিনদিন চলছে আজ।
ছবিটির গল্পে বেশ ম্যাজিক রয়েছে। ছবি শেষের একটু আগে মূল গল্পের সন্ধান পাবেন দর্শকরা। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা চলচ্চিত্রের জন্য। গল্পটা ভালো বুনেছেন রায়হান খান। যদিও মাঝে কিছুটা ধীর গতিতে চলেছে ছবির গল্প। তবে এটা পুষিয়ে দিয়েছে শিল্পীদের অভিনয়। গল্পের জন্য একটা ধন্যবাদ দেয়া যায় গল্পকারকে।
এটি তানিয়া আহমেদের প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনা। তবে কোথাও সেটার আঁচ পাওয়া যায়নি। নিপুণ দক্ষতায় এটি পরিচালনা করেছেন তিনি। আর ট্রেলারে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তির আগেই। গল্পটার উপস্থাপনা ভালো করার আপ্রাণ চেষ্টা ছিলো তার। প্রথম সিনেমা হিসেবে একটা বড় ধন্যবাদ তার প্রাপ্য।
তারিক আনাম খান যে একজন ব্রিলিয়ান্ট অভিনেতা সেটা প্রথম দৃশ্য থেকেই প্রমাণ দিয়েছেন। তার অভিনয়, সংলাপ বলার ভঙ্গি, ম্যানারিজম, পোশাক সবকিছু অসাধারণ। চোখ ফেরানো যায়না।
পোশাক পরিকল্পনার জন্য তানিয়া আহমেদকে ধন্যবাদ। তিনি নিজেই এটা করছেন। প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর পোশাক তার ডিজাইনে করা। গানের দৃশ্যগুলোতে পোশাক বিন্যাস আরও সুন্দর ছিলো। মিমকে সবচেয়ে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই ছবিটিতে। আকর্ষণীয় ও আবেদনময়ী লেগেছে খুব।
তারিক আনাম খানের সঙ্গে কয়েকটা দৃশ্যে মিম অভিনয় করেছেন দুর্দান্ত। মিশু সাব্বির আর মীর সাব্বিবরের অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ইরফান সাজ্জাদের লুক সুন্দর। অভিনয়ে বেশ ভালো। তবে একটু জড়তা কোথাও হয়তো ছিলো। কাটিয়ে উঠলে ভালো করবেন। পুরো ছবির সংলাপ, প্রতিটা গানের ইংরেজি সাব টাইটেল, ভালো উদ্যোগ।
‘ভালোবাসা এমনই হয়’ সিনেমাটির একটা গল্পের ভেতর আরেকটা গল্প এসে ঢুকে গেছে। গল্পের সমন্বয়টা সুন্দরভাবে হয়েছিল বলে বিরক্ত লাগেনি।
সিনেমা দেখা শেষে জাহাঙ্গীর নামের একজন লাইটম্যান বললেন, এমন সুন্দর ছবির ব্যবসা আরও ভালো হওয়া উচিত। কিন্তু দর্শক বেশী আসেনা। তাহলে সিনেমা শিল্প, সিনেমার হল চলবে কীভাবে? এই প্রশ্নটা দর্শকের কাছে রেখে লেখাটা শেষ করছি।
Comments